সাক্ষাৎকারঃ গ্রাফিত্তি সম্পাদক শুভঙ্কর দাশ - কামরুল হুদা পথিক

কামরুল হুদা পথিক

সম্পাদক: দ্রষ্টব্য ও করাতকল

সর্বশেষ

Home Top Ad

আপনি জীবদ্দশায় অপ্রাতিষ্ঠানিক থাকতে পারেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান নামের বুনোশুয়োর আপনাকে থাকতে দেবেনা কারণ, তাদের ‘ঘি’ বলেন আর ‘গু’ বলেন কোন কিছুতে ‘না’ নেই

সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯

সাক্ষাৎকারঃ গ্রাফিত্তি সম্পাদক শুভঙ্কর দাশ

শুভঙ্কর দাশ একজন ছোটো কাগজের সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক ও সক্রীয় একজন মানুষ। প্রায় ২ যুগের অধিক (২৬/২৭ বছর) আগে ‘সমবেত আর্তনাদ’ ও ‘উত্তর পর্ব এই বীষ অর্জন’ দুটো ছোটোকাগজ সম্পাদনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা হলেও পরবর্তিকালে তার মূল সম্পাদিত কাগজ ও প্রকাশনার নাম ‘গ্রাফিত্তি’। ১৯৬৩তে কোলকাতায় জন্ম নেয়া শুভঙ্কর দাশের বসবাস ১১৭ বোসপুকুর রোড, কোলকাতা ৩৯। তার বাসাটি বহু আগে থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের একটা ঠেক হিসেবে আমাদের জানা। তার জীবনসঙ্গী শর্মী পা-ে নিজেও লিটলম্যাগাজিন এর লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাদের যৌথ অনেক কাজের মধ্যে অষষ ঙঁঃ ঠরড়ষবহপব ১ এবং ২ অন্যতম। ঠিক কতো সালে গ্রাফিত্তি শুরু করেন বা কতোটি ইস্যু এ পর্যন্ত বের হয়েছে তার হিসেব রাখেন নি শুভঙ্কর, কারণ তা তার কাছে এটা কোনো গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তবে গ্রাফিত্তি টানা দু’বছর সাপ্তাহিক বেরিয়েছে, যেটা উল্লেখ করার মতো। ছোটো বড় কিংবা কখনো এক পাতার কাগজ হিসেবেও গ্রাফিত্তি বেরিয়েছে এবং এখনো প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনে ভূমিকা রাখছে। সম্পাদনা ছাড়াও তিনি বাংলা কবিতা (২৪ টি কাব্যগ্রন্থ), অনুবাদ ও চলচ্চিত্র সম্পাদনায় নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছেন। ১৯৯৫/৯৬ সালে সুবিমল মিশ্র সংখ্যার কাজ করার সুবাদে আমার শুভঙ্কর দাশের সাথে দেখা ও পরিচয় ঘটে। তারপর আর যাওয়া হয় নি, কিন্তু আমাদের মধ্যে যোগাযোগ ও কাগজের পরিচয় ও বিনিময় ছিলো। সে প্রেক্ষিতেই দ্রষ্টব্য ১৪ সংখ্যায় শুভঙ্কর দাশের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলন এর পেছনের, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিষয়-আসয় নিয়ে একটি চিন্তাসূত্র তৈরির কথা ভেবে প্রযুক্তি নির্ভরতায় প্রায় মাস জুড়ে এই কথোপকথন তৈরি করি, যেখানে অনেক কিছুই উঠে এসেছে, যা পরবর্তি প্রজন্মের কাছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। কোলকাতার বইমেলায় লিটলম্যাগাজিন স্টল নিয়ে যে মুভমেন্ট হলো এবার সেখানে শুভঙ্কর দাশসহ অন্যান্যরা যখন খুব ঝামেলায় তখন শুভঙ্কর আমায় সময় দিয়েছেন অকৃপনভাবে। কথোপকথন পর্বটিতে প্রযুক্তিগত সময়গুলো ও মাঝপর্বের ক্ষুদ্র আলাপগুলোও সংযুক্ত করা হয়েছে, কারণ এতে আলোচনাটি গতিশীল মনে হতে পারে... 

পথিকঃ লিটল ম্যাগাজিন ঠিক কবে শুরু করলেন আর কি ভেবে? মানে কোন বিষয়টি আপনাকে লিটল ম্যাগাজিন করতে অনেকটা ঠেলে দিয়েছে? 

শুভঙ্কর দাশঃ ৮৭-৮৮ নাগাদ আমি আর সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ‘সমবেত আর্তনাদ’ নামে একটা কাগজ শুরু করি। এই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সিনিয়ার সঞ্জীব নন। আমার বন্ধু সঞ্জীব। পরে অবশ্য সে আর থাকেনি লেখালিখির জগতে। হারিয়ে গিয়েছিল, যেভাবে হারিয়ে গেছে কতজন। এখন ভাবলে অবাক লাগে। যদিও তাদের কারো প্রতিভা কারো চেয়ে কিছু খাটো ছিল না। কিন্তু জীবনের সব গাঁট তারা পেরোতে পারে নি। অথবা ফাঁদ। অনেকে বলেন অবশ্য জীবনটাই একটা ফাঁদ। কিন্তু সেটা টের পেয়ে তা কাটানোর লড়াই না লড়তে পারলে এই হারিয়ে যাওয়া বা খতম হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এ কথা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বলেই হয়ত এই কাগজটার শুরু। নিজেদের কথা নিজেদের মতো করে বলার জন্য। লেখালিখির বিরুদ্ধে কাজ করা প্রথম গাঁট চাকরি। যার ধান্দায় নাস্তানাবুদ হয়ে লেখা ছেড়েছেন অনেকে, মেনে নিয়েছেন ফাঁদের প্রলোভন, এ তো আমার নিজের চোখে দেখা। এরপর সেই অমোঘ দ্বিতীয় গাঁট, বিবাহ। আর তৃতীয় গাঁট সন্তান। এই তিনটে গাঁট পেরোলে পরে পথিক হওয়া যায়, এমন একটা কথা আমিও মানতাম। এখনও যে মানি না তা নয়। এছাড়াও আছে পচুর প্রোরোচনা, যেন প্রাথমিক ভাবে সবকিছুই স্বাধীন লেখার বিরুদ্ধচারী। মানে তুমি লেখো তাও লিটলম্যাগাজিনে এরকম একটা অবস্থান কাউকে বোঝানো যায় না। নিজের প্রেমিকাকেও নয়। আর সাধারণ সাংসারিক লোকজন তো চিরকালই বলত এখনও বলে নিশ্চয়ই-লিখে কী হবে? কিছুই হয় না হয়ত। অথবা কোথাও একটা মানুষকে তা একদিন বেশি বেঁচে থাকতে সাহায্য করে বা আত্মহত্যার থেকে ফিরিয়ে আনে। এনেছে এ কথা আমরা জানি। তো যা বলছিলাম সঞ্জীবের সাথে ‘সমবেত আর্তনাদ’ করছিলাম যে সময়ে, সে সময়ে আমার প্রথম এক ফর্মার কবিতার বই ‘বিকৃত মস্তিষ্কদের গান’ বেরিয়ে গেছে সুশীল দে সরকার সম্পাদিত উত্তরণ পত্রিকা থেকে। পরে যে কাগজের নাম হবে ‘সাম্প্রতিক উত্তরণ’। সুশীলদার উৎসাহ আর প্রশ্রয়ে সে বই বইমেলাতে সুশীলদার লিটলম্যাগাজিন টেবিল থেকে বিক্রিও হয়েছিল প্রচুর। ওই একজন সোজা শিরদাঁড়ার বামপন্থী মানুষ যাকে আমরা হারিয়েছি। ব্রেন ক্যান্সারে মারা গেছিলেন সুশীলদা কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। তার সংসারের লোকজন বা ফাঁদ ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি মারা যাবেন, স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। মিছি মিছি টাকা পয়সা খরচা করে কী লাভ। আমি বাড়ি বয়ে আমার চেনা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নিয়ে গিয়ে ওষুধ কিনে দিয়ে বোকা হয়ে দেখেছিলাম সেই ওষুধ পড়ে আছে যেমন কে তেমন। কেউ খাওয়াতে চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। কীভাবে চিকিৎসা হবে তার আলোচনা করে গেছে শুধু। অবাক হয়েছিলাম, কারণ বোধ হয় তখনো বিশ্বাস করতাম এই ন্যাকা লাইনে, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’। একজন লিটল ম্যাগাজিন লেখকের এভাবেই বোধহয় মৃত্যু হয়, হাস্যকর এবং হৃদয় বিদারক। এইসব উপহাস এইসব অপ্রেম আমাকে কাগজ করতে সাহায্য করেছে। ওইসব স্মৃতি সেইসব রবিবারগুলোর। তার হরিদেবপুরের এক কামরার ভাড়া বাড়িতে সকালের সেই আড্ডাগুলোর। তার হাতে দারুণ সব রান্না খাওয়ার পল অনুপলগুলো। আমাকে আরো কিছুদিন লড়তে সাহায্য করবে নিশ্চয়ই। 

এরকমই প্রায় ঘটে ছিল গদ্যকার বামপন্থী উদয়ন ঘোষের সঙ্গে। যদিও তিনি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় বিশ্বাস করতেন না। গ্রাফিত্তির এক আড্ডায় তিনি নিজের মুখেই এ কথা স্বীকার করেন এবং যা শোনার পর আমরা তার উপন্যাস ‘স্বপনের ম্যাজিক রিয়েলিটি’ না করার সিদ্ধান্ত নিই। ছেপে ফেলা চার ফর্মা বিক্রি করে দি ওজন দরে। তবু এত কিছুর পর আমি মনে করি তিনি অন্যরকম লেখক ছিলেন। বিখ্যাত হওয়ার ফাঁদ থেকে তিনি বেরোতে পারেন নি। তবু তিনি প্রয়াত হলে তার শ্মশান সঙ্গী হয়েছি। দেখেছি সেই শেষ যাত্রায় কেউই প্রায় ছিল না। আমি, শান্তনু, লালা এবং তার এক বন্ধু ছাড়া। আর ছিল কিছু আত্মীয়পরিজন এবং ৩ টাকার একটা গাঁদা ফুলের মালা, যাতে ফুলের থেকে দঁড়ি বেশি। তিনি শুধু লিটলম্যাগাজিনের লেখক হলেও এর থেকে খুব বেশি কিছু জুটত না তার জানি। এটাই আলাগ হওয়ার মজা বোধহয়। আলাগ হতে পারার। সঞ্জীব আর আমি ঠিক করি আমরা একটা ছোটো প্রকাশনা সংস্থা করব। তখনই ঠিক হয় গ্রাফিত্তি নামটা। আমার দ্বিতীয় এক ফর্মার কবিতার বই ‘পরী বিষয়ক খসড়া’ ছিল গ্রাফিত্তির প্রথম বই। যাকে সুবিমল মিশ্র আদর করে ডাকতেন ‘পরী বিষয়ক খচরামি’ বলে। কেন গ্রাফিত্তি? কারণ আমদের মনে হয়েছিল এই দেওয়াল লিখনেই ধরা পড়ে সময়, ভবিষ্যৎ। পরে অবশ্য আরো একটু শিক্ষিত হয়ে সাইমন গারফাঙ্কেল-এর গানের লাইনগুলো আমরা ধার নিয়ে ছিলাম। ঞযব ড়িৎফং ড়ভ ঃযব ঢ়ৎড়ঢ়যবঃং ধৎব ডৎরঃঃবহ ড়হ ঃযব ংঁনধিু ধিষষং অহফ ঃবহবসবহঃ যধষষং.

পথিকঃ বিষয়টা কি এমন যে, কেউ বা কোনো বিষয়/ ঘটনা প্ররোচিত করেছে না নিজেই নিজেকে ঠেলে দিয়েছেন এ পথে নিজের দায়বোধ থেকে? 

শুভঙ্কর দাশঃ এই প্রশ্নটা জুড়ে আছে প্রথমটার সাথে। আলাদা করে খুব বেশি কিছুু বলার ইেন, শুধু বলা যায় যদি আগের উত্তরটা একটু বিশ্লেষণ করা যায় তবে বোঝা যাবে যে, রোজকার এই বেঁচে থাকা আমাদের, আসলে নিয়ন্ত্রিত। সে আপনি চান বা না চান। আমি যদি নিজেকে স্বাধীন ভাবি তাহলে এর বিরুদ্ধাচারণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ভাবা যাক সুশীলদার আত্মীয়স্বজনদের কথা। তারা কেন বিনা চিকিৎসাতে তাকে ফেলে রেখে মরতে দিলো? আসলে যেটুকু এই মধ্যবিত্তদের আয়ত্বে সেটুকু খরচ করে কপর্দক শূন্য হতে তারা ভয় পায়। ‘বেঁচে থাকা এমনই মজার’ যে পরম আত্মীয়কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে সে নিজে বেঁচে থাকতে চায় পুঁজি আঁকড়ে। মূল্যবোধ এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে অন্য কেউ ওষুধ দিয়ে গেলেও তা তারা খাওয়াতে ভুলে যায়। যেতে থাকে। এর বিরোধিতা আপনি কীভাবে করবেন? মনে পড়ছে আমার বাবা তখন হাসপাতালে ভর্তি। রাতে হাসপাতালে জেগে থাকার ডিউটি আমার। যদি কখনো সে অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে জানবেন বহু রাতে রিসেপশানে ফোন বেজে উঠলে কীরকম ছ্যাঁত করে ওঠে বুক। এবার কার পালা এলো। ওষুধ চাইছে না আবার কেউ মারা গেল। তো সেই হাসপাতালে দেখেছি জমি বিক্রির সব টাকা শেষ করেও বাবা সুস্থ না হলে কীরকম করে তার পুত্র কাঁদতে পারে। এরপর মরার জন্য বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে। কীভাবে বিরোধিতা করবেন এর? এইসব আরো কতকিছু সারাক্ষণ আমার গলা টিপে ধরে, আমি ছটফট করি। লিখি। যদি কারো কানে দেওয়া যায়। যদি কেউ আরেকবার ডাক দেয় বিপ্লব ত্বরান্বিত করার। তারা কি আবার বলবে চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান। যদি বলে তারো বিরোধিতা করব আমি। আপনি তো এই সমাজেই বাঁচেন। আপনার বাড়ি তো মঙ্গল গ্রহে নয়। তাই এ নিয়েই তো আপনি কথা বলবেন, ভাববেন। মঙ্গলে নুডিস্ট কলোনি আছে কিনা সেটা তো আপনার ভাবার কথা নয়, অবশ্য ভাবলেও ঠেকাচ্ছে কে? অবশ্য বাম্পন্থাও যে খুব সুবিধের সে কথা বলা যায় না বোধহয়। আমি তো স্টালিন আর হিটলারে কোনো তফাৎ দেখি না। দুজনেই মানুষ মেরেছে খোলামকুচির মতো। 

পথিকঃ বেশ হচ্ছে কথা পরম্পরা। আমি বলেছি কখনো সংক্ষিপ্ত কখনো ডিটেইলে যাবেন। সমস্যা নেই। আমি একটা ভালো কিছু বের করে আনতে চাইছি। এবার তিন নাম্বারটা লিখুন। আমি পরের প্রশ্ন করছি... 

শুভঙ্কর দাশঃ এই তো...আপনি? এক রকম চলছে। কাজগুলো নিয়ে আছি কিছুটা ব্যাস্ত। অতবড় কাগজ করা পরিশ্রমের কাজ তো বটেই। 

পথিকঃ নিজেদের কাজটা এগিয়ে যেতে হবে দাদা। নতুনরা আসছে। ওরা তো বলতে হবে। আমাদের করাতকল থেকে নিজেদের বই হচ্ছে এবার ৮ টার মতো

 শুভঙ্কর দাশঃ বা বা বেশ। খুব ভালো। আপনি কি বাসায়? না বাইরে? আমি সন্ধ্যেটা বাসাতেই থাকি। বাঁ চোখের একটা অসুবিধে আছে। 
পথিকঃ শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। আমার কিন্তু ৯১ এ হার্ট সার্জারী। চলছে গাড়ি 
শুভঙ্কর দাশঃ চালাতেই হবে যে। আমিও চালাচ্ছি হই হই। হ্যাঁ, চলুক রেলগাড়ি। 
পথিকঃ দাদা লিখতে থাকে উত্তর। সাক্ষাৎকারটা... 
শুভঙ্কর দাশঃ হ্যাঁ কাল ৩ নম্বরটা হয়ে যাওয়া উচিৎ। দেখা যাক। উচিৎ... 
পথিকঃ হ্যাঁ। আমি কিন্তু চালিয়ে যাবো 
শুভঙ্করঃ বেশ তো। তাই হোক। ভালো থাকবেন
পথিকঃ আপনিও 

পথিকঃ একটু শুরুর সময়টা ডিটেইলস বলবেন কি? জানার আগ্রহ বোধ করছি এ কারণে যে এ পথের শুরুটা কি একই ধরনের কি না, জানতে। না কি স্থান কাল ভেদে তার মাত্রা ভিন্ন? 

শুভঙ্কর দাশঃ শুরু একটা থাকেই। অত দিন আগের ঘটনা সব তো মনেও নেই ঠিকঠাক। তবে স্বাধীনতার পোকা মাথায় ছিল নিশ্চয়ই। যে জন্য গ্রাফিত্তি প্রকাশনা করা পরে গ্রাফিত্তি পত্রিকা ইত্যাদি। কোনো সময়ই আমাদের পয়সা হাতে থাকতো না, তবু কাগজ করতে হবে এই তাড়না থেকে অফসেট জেরক্সে একটা ইউ ওয়ান পাতার এপিঠ ওপিঠ আমরা প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করেছি। ও ভাবে ছাপার বড় সুবিধে একটা ছিল হাতে আঁকা স্কেচ, ছবি ইত্যাদি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যেত। দাম ছিল এক টাকা। কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে প্রতি শনিবার সেটা বেরোত। বিক্রিও করা হতো যাতে পরের সংখ্যার কাজটা করা যায়। একশ কপি ছাপতে পড়ত গোটা ষাটেক টাকা। তাই জোগাড় করতে হিমশিম। একদিন কফি হাউস কর্তৃপক্ষ আমাদের এই এক পাতা বিক্রি নিষেধ করে দিলেন। কারণ দেখানো হয়েছিল যে এতে কফি হাউসের বিক্রিবাটায় লস হচ্ছে। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এই কাগজ নিতে গিয়ে বলেছিলেন-‘শুনলাম কী একটা অশ্লীল কাগজ নাকি বেরিয়েছে। এটা কি সেটা’? মজা পেয়েছিলাম শুনে। এই সন্দীপনদাই তো মিনি বুকে ছেপে প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করেছেন একদিন। কাঁধে ঝাঁকা ঝুলিয়ে সে বই রাস্তাঘাটে বিক্রিও করেছেন বলে শুনেছি। একটা সময়তো বহু মিনি বুক প্রকাশিত হতো এবং মিনি পত্রিকাও এবং সেগুলো বেশ ভালো কাজ। গ্রাফিত্তি অবশ্য শুধু একটি প্রকাশনা হয়ে থাকেনি, তা ক্রমে হয়ে উঠেছিল আমাদের পৃথিবী আমাদের বেঁচে থাকার পদ্ধতি। আমি গ্রাফিত্তি তৈরি করেছিলাম নাকি গ্রাফিত্তি আমাকে তৈরি করেছিল? আসলে আমরা কেউই মায়ের পেট থেকে প-িত হয়ে আসিনি। আমাদের জীবন, আমাদের যাপন, আমাদের গ্রাফিত্তি সবই গড়ে উঠেছিল একসাথে, আর সেই চলা এখনো আমাদের শেষ হয়নি। শিক্ষাও। ওই জন্য মহিনের গৌতমদার গানটা এখনও গাই মাঝে মাঝে, অবশ্যই আমার মতো করে-‘কত কী করার আছে বাকি’। তাই আমার কবিস্বত্তা যদি কিছু থেকে থাকে তাতো ঋণী এই সমস্ত মানুষজনের কাছে। যাদের উৎসাহ আর প্রশ্রয় আর ভালোবাসা ছাড়া কিছুই করা হয়ে উঠত না আমার। এরকম কাছাকাছি সময় সুবিমল মিশ্রকে আবিষ্কার করি আমি। রাসবিহারী মোড়ে রমাপতি বাবুর বুক স্টলে চুপি চুপি চলে যেতাম বই ঘাঁটতে কারণ সবসময় পয়সা থাকত না কেনার। রমাপতিদা অনেক সময় সাজেস্ট করতেন কোন লিটল ম্যাগাজিন পড়া উচিৎ। আজ সে দোকানও নেই, নেই সেই মানুষগুলোও। তা সেখানে একদিন একটা পত্রিকা ‘বিজ্ঞাপন’ হাতে এলো। যা পরে ‘বিজ্ঞাপন পর্ব’ নামে পরিচিত হবে। সেখানেই সুবিমল মিশ্রর লেখালিখি পড়া শুরু এবং প্রেম। মানে তাঁর লেখালিখির প্রেমে পড়ে যাওয়া আরকি। তারপর তার সাথে বইমেলায় সাহস করে আলাপ করা এবং ক্রমে এক সাথে কাজ করার সৌভাগ্য। বইমেলায় একসাথে টেবিল নেওয়া, আরো কাছ থেকে তাকে দেখা। আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় তাই সুবিমল মিশ্রর নাম উপরের দিকেই থাকবে। এত খোলাখুলি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা, সোজাসাপ্টা তার মতো করে বাংলা ভাষায় তার আগে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ বলেছিলেন বলে আমার জানা নেই। হাংরিরাও না। যদিও হাংরি গদ্যকার সুভাষ ঘোষের নেওয়া দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সেই সাক্ষাৎকার নির্ভর করেই সুবিমল তার প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ম্যানিফেস্টোটি রচনা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে সে কথার উল্লেখ না করলেও পরে একটি সাক্ষাৎকারে সেটি স্বীকার করেন তিনি। যদিও শেষ অবধি তিনি কতটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী ছিলেন, শুধুই আনন্দবাজার বিরোধী ছিলেন কি না, সেই তর্ক থেকে যাবে এবং তাতেও তাকে ছোটো করে দেখার যুক্তি নেই। তিনি তার মতো করে বিরোধিতা করেছেন। যদিও ২০১০-এ ঢাকায় গিয়ে অবিশ্বাসী গলায় মুহম্মদ খসরু যখন আমাকে প্রশ্ন করেন-‘এটা কি সত্যি যে সুবিমলদার ইংরেজি অনুবাদের বই একটা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানি প্রকাশ করছে’? তখন খারাপ লাগলেও এই সত্যিটা আমাকে স্বীকার করতেই হয়। যদিও সেই বই কিনে আমি আমার বহু বিদেশী বন্ধুকে উপহার দিয়েছি। অথচ এমন নয় যে সে বই বিদেশে কোনো ছোটো প্রকাশনা ছাপত না। এ কথা আমি সরাসরি সুবিমলদাকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি বলেছিলেন এটা ওনার অনুবাদকের কাজ। তিনিই সব ঠিক করেছেন। লেখকের সম্মতি ছাড়া এটা কীভাবে করা যায় আমার জানা নেই। নিপীড়িত শোষিত মানুষের কথা বলে এখানে যেমন রাজ্যে সিপিএম-এর মতো কংগ্রেস বিরোধী হয়েও সেন্টারে তাদের সাথেই হাত মেলায় একটা বামপন্থী দল ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই লেগেছিল আমার। এই মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির কাছে আড়ে বহরে আনন্দবাজার তো ছেলেমানুষ। সুবিমলদা তবে কি শেষ অবধি সারেন্ডার করলেন? অথচ তিনিই বার বার আমাদের বলেছেন সারেন্ডার না করতে। গ্রাফিত্তির এক অনুষ্ঠানে আমাদের মুদিয়ালি বাড়ির দেওয়ালে তিনিই তো লিখেছিলেন-‘সারেন্ডার নাঃ নাঃ নাঃ নাঃ’। নাকি এও আরেক বিরোধী রাজনীতি যা আমার মোটা মাথায় ঢোকে না? এটা আমাকে আজও কষ্ট দেয়। প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলনে এটাকে একটা মোড় ঘোরা হিসেবে আমি চিহ্নিত করব। এরপর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠান বিরোধী বলতে ঘেন্না লাগে আমার। আমি বরং একজন স্বাধীন লেখক। একা, দলহীন। 

পথিকঃ দাদা। শুভ সন্ধ্যা। আমি কিন্তু খুব জোসে আছি। ভালো লাগছে এ ভেবে যে শুরুটা হয়ে গেছে। আমরা ধীরে ধীরে অনেকদূর চলে যাবো। কাজ না হলেও কাল আবার ৩ টা প্রশ্ন পেয়ে যাবেন। এমন একটা তথ্যবহুল কাজ বের করতে চাই যেনো নতুনদের কাছে এটা টেক্সট হয় লিটলাম্যাগ মুভমেন্টের। 
শুভঙ্করঃ বেশ ভালো থাকবেন। 
পথিকঃ আপনিও। আচ্ছা সুজোয় মোদক, বিপ্লব নায়ক এরা কি সরে গেছে আমাদের থেকে? 
শুভঙ্করঃ মোদকের কথা বলতে পারব না তবে বিপ্লব নায়েকের খবর নেই কোনো। 
পথিকঃ সুবিমল মিশ্র সংখ্যায় লিখেছিলো। গল্প লিখছে কারা? 
শুভঙ্করঃ এখানে অন্যরকম লিখছে রাজর্ষি পি দাস। একসময় রাজা দাস নামে গ্রাফিত্তিতে লিখেছে। 
পথিকঃ তাহলে উনার গল্প পাঠাতে বলবেন। ছাপতে চাই। 
শুভঙ্করঃ বেশ। ওর আসার কথা আমার বাড়ি। 
পথিকঃ তাই। বলবেন। একটা নতুন গল্প আমাদের জন্য দিবেন। 

পথিকঃ ‘আমি গ্রাফিত্তি তৈরি করেছিলাম নাকি গ্রাফিত্তি আমাকে তৈরি করেছিল?’ এরকমই বোধ করি মনে হয়। দ্রষ্টব্য আমি বানিয়েছি না দ্রষ্টব্য আমাকে বানিয়েছে তা নিয়ে আমারও সংশয় লাগে। তাহলে ধরে নেয়া যায় ৮৭/৮৮ এর দিকে গ্রাফিত্তির যাত্রা। এটা কি প্রথা ভাঙ্গার যাত্রা বা বিরোধিতার জায়গা বলা যায়? তারপর আপনার হাত দিয়ে আর কি কি কাগজ বের হয়েছে? 

শুভঙ্কর দাশঃ প্রথা ভাঙার যাত্রা অবশ্যই। কারণ নাহলে তো সেসব কাগজেই লিখতাম যা বাজারে চালু। সেকেন্ড গ্রেড খবরের কাগজগুলো যেমন বর্তমান, গণশক্তি ইত্যাদি কাগজগুলোতে অল্প তেল মারলেই লেখা যেত। আমার এক কাছের বন্ধুতো তো আজকাল-এ লেখা শুরু করেন কাফকা’র উপর লেখা লিখে। তখন আজকাল একটা ব্যাপার ছিল। তার রবিবারের পাতা আনন্দবাজারকেও টেক্কা দিচ্ছিল তখন। সন্দীপনদার একটা কথা মনে পড়ল এ প্রসঙ্গে-‘আমি তো তেলের বাটি নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছি কিন্তু কাকে তেল মারব, বুঝতে পারছি না’। সন্দীপনদার ভাষায় বলা যায়, ‘টেবিলের অন্যদিকে বসে থাকা এইসব পাউডারড সিম্পাঞ্জিদের’ থেকে দূরে থেকে আরাম পেতাম আমি। বরং খুঁজে বেড়িয়েছি আর কারা ভাবছেন বা ভাবতেন আমাদের মতো করে। সেই ভাবনা থেকেই অনুবাদের দিকে ঝুঁকি আমি। বিট জেনারেশান তার অন্যতম। কেরুয়াক, বারোজ, গিন্সবার্গ, করসো’র সাক্ষাৎকারের বইটা আমরা করেছিলাম। সে সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গিন্সবার্গকে আমেরিকার তৃতীয় শ্রেণির লেখক বলে বসেন। অথচ সি আই এ ফান্ডেড আইওয়াতে গিয়ে তারপর গিন্সবার্গ ফান্ডের পয়সায় আমেরিকা ঘুরতে তার আঁটকায় নি (তথ্য সূত্র-অ্যালেন গিন্সবার্গ ইন আমেরিকা-জেন ক্রামার)। তো তাই আমরা ভাবলাম গিন্সবার্গের কবিতা, ডায়েরি, স্কেচ, সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা বই করলে কেমন হয়? পাঠক জানুক না লোকটা কে। হলো সেটা। অনুবাদ করতে গিয়ে এক অনুবাদক আমাকে আড়ালে বলেছিলেন-‘আমার ধারণা ছিল না লোকটা এত প-িত’। অথচ এই অনুবাদকের পড়াশুনো কিছু কম ছিল না। এই যে না পড়েই ধারণা করে নেওয়ার পদ্ধতি তার বিরুদ্ধেই এই বইটা করার দরকার ছিল আমাদের। কবি বব রোজেনথাল তখন গিন্সবার্গ ট্রাস্টের সঙ্গে ছিলেন। আমার বন্ধু। তার সাহায্যে কাজটা করার অনুমতিও পেলাম। বব ছিলেন গিন্সবার্গের জীবনের শেষ ২৫ বছরের সঙ্গী এবং সেক্রেটারি। পরে যখন বব এবং গিন্সবার্গ রিসার্চার বিল মরগ্যান ভারতে আসেন, গিন্সবার্গ কোথায় কোথায় ঘুরেছিলেন তা আবার নিজেদের চোখে দেখতে এবং তার পুরোন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মোলাকাত করতে তখন যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বার বার গ্র্যান্ডে মাল না খেলে কথা বলা যাবে না এ কথা শুনে বিরক্ত বোধ করেছেন তেমন মলয় রায়চৌধুরীর বাড়িতে ডেকে নেওয়ার আথিতেয়তা তাদের মুগ্ধ করেছিল। আমাদের উপর ভার পড়েছিল কোলকাতা ঘুরিয়ে দেখানোর। আমজাদিয়া হোটেল থেকে শ্মশান, গাঁজা থেকে খোলা ছাতে ঠা-া বিয়ার আর মশা কামড়ালেই ববের ভিতু কণ্ঠ-‘ম্যালেরিয়া হবে না তো’? বব ইদানিং পড়াচ্ছে এবং রিটায়ার করেই বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা বলছে। আর গিন্সবার্গের উপর সেরা বইটা ওই লিখবে, এ কথা বলতেও ভুলছে না। এরকম সময়ই আর্তোর কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করি আমরা। একটা আর্ট সিরিজ প্রকাশ করি। দালির মাই সিক্রেট লাইফের কিছু অংশের অনুবাদ, রামকিঙ্করের নিজের কথা বার্তা, গঁগা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। ওই লিস্ট বলতে গেলে রাত ভোর হয়ে যাবে। আমাদের দোকানে বিল মরগান ঝঐওখঅখওচও ঞঐঊ এজঅঋঋওঞও ইঙঙক ঝঞঙজঊ, কড়ষশধঃধ ২০০৪.ঝঁনযধহশধৎ উধং আমজাদিয়া হোটেলের (এখন আর নেই, গুদাম হয়ে গেছে) সামনে আমি, বিল আর শর্মী ওহ ভৎড়হঃ ড়ভ ধ নঁরষফরহম রহ ৎঁরহং যিরপয ড়হপব ধিং অসলধফরধ ঐড়ঃবষ যিবৎব এরহংনবৎম ংঃধুবফ যিবহ যব ধিং রহ কড়ষশধঃধ.... ঝঁনযধহশধৎ উধং ছবিগুলো আসলে এত পুরোন... আমার চুল ছোটো মকানে আমার মা বেঁচে আছে আরকি। মা মারা জাওয়ার পর লোকে চুল কেটে ফেলে কিন্তু আমি আর কাটি নি। এখন দেখলাম ২০০৪এ এরা এসেছিল। তবু আরো দু’জনের কথা বলি। প্রথম জন অবনী ধর। হাংরি লেখক না হয়েও হাংরিদের সাথে ঘর করেছেন। মদ না খেয়েও নাকি চাট এনে দেওয়ার কাজ করতেন। উন্নাসিক হাংরিরা তাকে তেমন পাত্তা দেননি কখনো। পেশায় মারচেন্ট জাহাজের নাবিক ছিলেন এবং সেই সুবাদে ঘুরেছেন পৃথিবীর না না জায়গায়। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘ওয়ান ব্রেড, ওয়ান সট’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মানির কোনো এক বন্দর শহর নিয়ে লেখা। যেখানে মেয়েরা পয়সা নয় পাউরুটির বদলে একবার লাগাতে দিচ্ছে। সেখান থেকেই এই নাম ওয়ান ব্রেড, ওয়ান সট এবং আরো একটি গল্প ‘ভাতের জন্য শশুরবাড়ি’ আমাকে পেড়ে ফেলেছিল জাস্ট। তার বই করেছিলাম আমরা। নাম ছিল ‘ওয়ান সট’। ফালগুনী রায়-এর ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’ খুঁজে পাই হাংরি গদ্যকার সুভাষ ঘোষের বইয়ের তাকে। সে বই পড়া একটা অভিজ্ঞতা। তার কবিতা আমরা ছাপতে শুরু করি শর্মীর কাগজ অর্বাচিন-এ। তারপর বই। তারপর লক্ষ্য করি তিনি হাংরিদের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তার পরের বইয়ের। ‘আমি অপদার্থ’ সেই নাম ব্যবহার করে আমরা আরো একটা বই করি তার প্রথম বইয়ে না ছাপা কবিতাগুলো নিয়ে। আর তার গদ্য ‘কাঠের ফুল’ও আলাদা চটি বই হয়ে বেরোয়। এবং তারপর একটা শর্ট ফিল্ম শর্মী ডায়রেক্ট করে ‘এবং ফালগুনী’ /ঞযব খড়ংঃ খরহবং ঙভ অ ইবধঁঃু গড়হংঃবৎ যা প্রায় পৃথিবী জুড়ে ৭/৮ টা ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখান হয়েছে। আমরা সেন্সর সার্টিফিকেটের ধার ধারি নি। সে ভাবেই এর ডিভিডিও বিক্রি হয়েছে। এখানে এর স্ক্রিনিং নিয়ে একটু বলা যেতে পারে-The experimental short film Ebang Falguni (The Lost Lines Of A Beautz Monster)will have two sereenings at the River To River Florence Indian Film Festival,Florence,Italz on Wednessdaz December 8th,2004 at 23.00hrs and on Saturdaz December 11th,2004 at 18.00hrs.It will feature in Indian Short Shorts section with English and Italian subtitles. Ebang Falguni is the creation of Sharmz Pandez a zoung poet.Her writings deal with sexual politics in a non-conformist stzle.Alwazs controversial her writings displaz a zoung, no-holds-barred ironz.An observer of life in a decazing post feudal third world existence.This is her first film. This screening follows closelz on the heels of its Asian debut in Kolkata,India on 19th November 2004 at its Asian premiere, where it set a heavz rush of cine-goers so that two shows had to be arranged in a verz short notice.Attended also bz some local press with critical acclaim."Poetrz in digital pixels....the visual collage brings home a sense of the inner turbulance and strife..." "Roz was rebellious in spirit and his writings speak of sexual politics.The scenes of male nuditz were essential to portraz his perspective.But I had to face a lot of problems finding the cast who could do the masturbation scene", sazs the 30 zear old first-time film-maker,who was later bailed out bz a Rabindra Bharati Universitz student. This film was world premiered at the Alternative Film Festival, Picciano, Italz(October, 2004). 19th November 2004 marked the Asian premiere of the film in Kolkata, India.

পথিকঃ আমরা দেখি লিটলম্যাগাজিন বহুকাল আগে থেকেই ছিলো। সেই প্রমথ চৌধুরীর সবুজ পত্রের আগে কিংবা পরে অনেক কাগজের নাম করা যায় যেগুলো সাময়িক কোনো উন্মাদনা থেকে নিজেদের নতুন লেখা প্রকাশের জায়গা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা যা বললেন বা জানি ঠিক সেখান থেকেই কি প্রতিষ্ঠানবিরোধী কনসেপ্টটি শুরু? যা সুবিমল মিশ্রের হাতে বুমেরাং হয়ে উঠে? 

শুভঙ্কর দাশঃ মোটামুটি তাই। হাংরিরাও করেছে কিন্তু সরাসরি বলেনি সে কথা। পরে একটা খবরের কাগজে সাক্ষাৎকারে মলয়দা বলেছিলেন বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠান বিরোধী কনসেপ্ট তিনিই এনেছেন। এ দিকে সুবিমলদা তার ইংরেজি অনুবাদের বইয়ের ব্যাক কভারে লিখেছিলেন তিনিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক। সে বইয়ের অনুবাদক আমার বন্ধু শ্রীধর মুখোপাধ্যায়। তার প্রথম কবিতা বইয়ের নাম ছিল ‘নিরোর বেহালা’, তো সেই বই ‘ক্যালকাটা ডেটলাইন’-এ অনুবাদকের নাম সে দিয়েছিল নিরো মুখার্জি। তো তাকে আমি ধরলাম ‘এটা কী ব্যাপার’? সে বলেছিল ‘তুমি তো জানো সুবিমলদাকে। উনিই এটা লিখে দিয়েছিলেন’। তো তারপর আমাদের কাগজে আমরা একটা মজা করি। ওই দুটো কোটেশান সুবিমলদা আর মলয়দা-র তুলে দিয়ে লিখেছিলাম প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার রাজা নির্বাচন করুন। ব্যাস আগুনে ঘি পড়লে জা হয় আর কি। একটা গোটা কাগজ আমাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে গেল। মানে জন্মাল আরকি। সে ইতিহাস তো আপনারা জানেন। জন্ম হলো বিপ্লব নায়েকের। হা...হা...হা...। এখানে একটা লিঙ্ক দিলাম-
http://graffiti-kolkata.blogspot.in/2009/09/voice-over-and-dialogues-from-short.html 

পথিকঃ প্রশ্নগুলোর নাম্বার ভুল হয়েছে। হবে ৪,৫ ও ৬। শেষটির উত্তর দেয়া হয় নি। আমি খুব ইন্টারেস্ট পাচ্ছি। অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। আপনি শেষটির উত্তর ৬ নাম্বার লিখে দিন। 

শুভঙ্করঃ বেশ ১১/২২/২০১৭ ১:১১অগ ফালগুনীকে ইতালিয়ান প্রেস বলেছিল ভারতের র‌্যাবো। ফালগুনীর নামের বানান নিয়ে না নান বিভ্রান্তি আছে। তার মূল কারণ ফালগুনী নিজেই তার নামের বানান নানারকম লিখেছেন, ফাল গুনি অবধি। ইংরেজি অন্য থিয়েটারের পর্ণব মুখোপাধ্যায় ফালগুনী কে নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার করেছিলেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। একটা শো আমাদের বইয়ের দোকান শীলালিপিতেও হয়। সেদিন বাঁশি বাজিয়েছিলেন বুলাদা মানে প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। এখানকার প্রথম বাংলা ব্যান্ড মহিনের ঘোড়াগুলি-র গৌতম দার ভাই এবং ফালগুনীর মিউজিক ডিরেক্টারও। শধধষ পযবংঃধ শড়ৎনড় পযড়ু হঁসনবৎ হরধব.বশঃঁ যড়ুঃড় লঁৎনড় ধৎড়, সঁংশরষ যড়পপযব ংড়ন সড়হব ঢ়ড়ৎপযব হধ ধশংধঃযব....শড়শযড়হড় নঁং ব লবঃব লবঃব শড়শযড়হড় যধহঃব যধহঃব সড়হব যড়পপযব বঃধ ঃড় নড়ষধ যড়ষড় হধ ...যধ যধযধ 

পথিকঃ কোনো সমস্যা নেই। আপনি যতোটুকু মনে আসে লিখবেন। আমি সবটা শেষ হলে কম্পাইল করে পাঠাবো। তখন সবটাতেই আপনি কলম চালাতে পারবেন। আমার ভালো লাগছে। ৬ নাম্বারটা শেষ হলে ৪ টা প্রশ্ন লিখবো। কিছু উত্তর সংক্ষেপে দিলেও চলবে। কিন্তু চাচ্ছি নতুন করে অনেক কথা জানুক পাঠক 

শুভঙ্করঃ আমি ববের বই নিয়ে কথা বলছিলাম আর আজই শুনলাম তার বইটা বেরোচ্ছে। ঝঃৎধরমযঃ অৎড়ঁহফ অষষবহ : ঙহ ঃযব ইঁংরহবংং ড়ভ ইবরহম অষষবহ এরহংনবৎম নু ইড়ন জড়ংবহঃযধষ রিষষ নব ঢ়ঁনষরংযবফ ২০১৮ ইবধঃফড়স ইড়ড়শং ভাবা যায়... হাংরিদের সাথে গ্রাফিত্তির ওঠাবসা কাজকর্ম অনেকদিনের যদিও আমরা কোনোদিনই হাংরি ছিলাম না। তবু দেখি ফালগুনীকে নিয়ে ‘একশ আশি ডিগ্রি’ পত্রিকায় লিখতে গিয়ে হাংরি সুবিমল বসাক-এর অনায়াস তথ্য বিচ্যুতি। বয়স হয়ত এই ভুলের কারণ। মনে আছে হাংরি সুভাষদাকে মানে সুভাষ ঘোষকে একবার শর্মী সামনাস্মানি বলেছিল-‘সুভাষ ঘোষ ফোকলা? সে কী’! উত্তরে সুভাষদার স্পষ্ট জবাব ছিল-‘সুভাষ ঘোষের লেখা তো ফোকলা নয়’। ভাবি এইসব। ভাবতে বাধ্য হই। হে পাঠক আপনারা তো জানেন সব। তবু আসুন আরেকবার খুলে বসি পুরোনো পাতাগুলো। ফালগুনী রায়ের বই ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৫ আগস্ট, ১৯৭৩-এ। প্রকাশক ছিলেন হাংরি গদ্যকার বাসুদেব দাশগুপ্ত। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোয় গ্রাফিত্তি থেকে। প্রথম গ্রাফিত্তি সংস্করণ হিসেবে ডিসেম্বর ১৯৯৩-এ। তখন ফালগুনীকে প্রায় ভুলে যেতে বসেছে সবাই। হাংরিদের বলতে শুনেছি ‘ও কোনো লেখকই নয়’। তারপর অবশ্য ঢোক গিলে ফালগুনীকে যুব সমাজের আইকন মানতে বাধ্য হয়েছে এরাই। গ্রাফিত্তি থেকেই জানুয়ারি ২০০৩-এ ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হয় ১৯৯৬-এর জুলাইয়ে ‘আমি অপদার্থ’। ১৯৯৫-এ ‘কাঠের ফুল’। শিলিগুড়ি থেকে রাজা সরকার-রা ছাড়া তখন ফালগুনীকে নিয়ে কেউই কোনো কাজ করেছেন বলে আমার জানা নেই। হলে জানিয়ে দেওয়া হোক। ওর অনেক পরে ‘দরগা রোড’ পত্রিকায় একটি সংখ্যায় ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’ গ্রাফিত্তির টাইটেল পেজ সহ প্রকাশিত হয়। কফি হাউসে উৎপল কুমার বসু বসে আছেন দেখে তার কাছে গিয়ে বলেছিলাম-‘একবার জানালেন না’। উত্তরে তিনি বলেছিলেন-‘জানাবার দরকার মনে করি নি’। তারপর থেকে তার লেখা আর আমি পড়ি না। পড়ার দরকার মনে হয়নি আর। আলোক সরকারের সাথে তিনিও সম্পাদক ম-লীতে যুক্ত ছিলেন তখন। তিনিও একদা হাংরি ছিলেন বলে শুনতে পাই। পরে অবশ্য আনন্দবাজারের পুরস্কার ধন্য হয়েছিলেন তিনি। ফালগুনীকে নিয়ে সবাই কাজ করুক আমরা চেয়েছি। আমরাই বলেছিলাম ফালগুনী কারো বাপের সম্পত্তি নয়। কিন্তু এই ম্যাওড়াপনা হাস্যকর লাগছে এখন। এভাবে কি ঐতিহাসিক তথ্যগুলো বেমালুম চেপে মুখ মুছে ঢেকুর তোলা সম্ভব কমরেইডস?

পথিকঃ বাংলাদেশেও ৮০'র দশকে কাজটি শুরু হয়। তখন বিশ্বের অন্য কোথাও প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কাজটি কার্যকর ছিলো না? অথবা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে? কিন্তু দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলকুমার মজুমদার, অমীয়ভূষণ মজুমদার কিংবা সুবিমল মিশ্র্র তাদের কাজগুলো ঠিক কবে থেকে চিহ্নিত করা যায়? 

শুভঙ্কর দাশঃ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কাজ কখনোই থেমে থাকে নি। বিদেশে অন্য নামে হয়েছে। ইন্ডি প্রেস তো এ কথাই বলে। আমার বেশ কিছু ইংরেজি কবিতার বই এ ধরনের প্রেস থেকে বেরিয়েছে। বাড়ির প্রিন্টারে বই ছেপে নিজের হাতে বই বাঁধাই করে চলেছে ‘গ্র্যান্ডমা মোজেস প্রেস’(অ্যামেরিকা), ‘কামিনী প্রেস’ (সুইডেন) এবং তারা বেছে নিয়েছে তাদের মতো করে ভালো লেখার সংজ্ঞা। কিছুদিন আগেও এফোর কাগজে প্রকাশিত হতো অ্যামেরিকা থেকে ‘ডিউরেবেল গুডস’ কাগজটা বন্ধ হয়ে গেল। যার একটা সংখ্যার আমন্ত্রিত সম্পাদক ছিলাম আমি। ডগ ম্যাথিউসান ‘ব্লিঙ্ক ইঙ্ক’ বলে একটা কাগজ করেন। যেখানে তিনি ছাপেন ৫০ শব্দের ভেতর লেখা গল্প। সাউথ আফ্রিকার গ্যারি কামস্কি-র ‘গ্রিন ড্র্যাগন’ বন্ধ হয়ে আছে বহু দিন। কিন্তু তার প্রকশনা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। আর কট কেউ লড়ে যাচ্ছে এ লড়াই যাদের কথা আমরা জানি না। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কথা আমি সেভাবে জানি না। তাই নাম করে বলতে পারব না। মানুষ থাকলে প্রতিবাদ থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। 

পথিকঃ দাদা, শুভ সকাল। কদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম। আজ রাতে কিছু প্রশ্ন সেন্ড করবো। আর একজনের গল্পের কথা বলেছিলেন। কবে পেতে পারি। আরেকটা কথা, আপনার অনুবাদের একটা বড় কাজ আমরা ছাপতে পারি। 
শুভঙ্করঃ আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তর শেষ হয়নি যদিও। ওটা নিয়ে আজ বসব। আমিও একটু ব্যাস্ত হয়ে আছি নানান অকাজে। অনুবাদ নিয়ে পরে ভাববো। আগে এটা শেষ করি। 

পথিকঃ ঠিক আছে। শেষ করেন। যাদের নাম আপনি করেছেন তারা কেউই ঘোষিত প্রতিষ্ঠান বিরোধী নয় একমাত্র সুবিমল মিশ্র ছাড়া। বাকিরা নিজের লেখার ভেতর বিরোধ চালিয়েছেন কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গালে চুমু খেতে এদের বাঁধেনি। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বামপন্থী পার্টির অবস্থান আগে ছিল। সেটাওতো একটা প্রতিষ্ঠান নাকি? আসলে এরা সবাই লেখক হতে চেয়েছেন। এটাও একটা স্ট্যাটাস সিকিং আমার কাছে। নিজেকে আলাদা করে ট্যাগ মেরে নেওয়া। এবং সেটা ভাঙ্গিয়ে খাওয়া। এভাবে নাম করলে বঙ্কিমচন্দের নাম করা হবে না কেন বা মাইকেলের? মাইকেলের ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ বা ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এই নাটক দুটো কেন বিরোধীদের বাইবেল বলে গণ্য হবে না? আর লেখা তো লেখককে একাই লিখতে হয়, দল করে লেখা সম্ভব নয়। দল করে কাগজ, প্রকাশনা, বিপ্লব, সংসার করা যেতে পারে কিন্তু লেখালিখি সম্ভব নয়। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। গ্রাফিত্তি করতে গিয়ে এটা আমার নজর এড়ায়নি। আমি যেহেতু এটা ছাড়া আর কিছুই করিনি কখনো তাই লিখতে পেরেছি মনে হয়। কিন্তু যে লোকটাকে খাদ্যের সন্ধানে বেগার খাটতে হয় সে কী করবে? আমি যেহেতু ছ’ মাসের বেশি চাকরি করিনি কখনো এর উত্তর আমার কাছেও নেই। আমি নিজেকে একজন স্বাধীন মানুষ ভাবতে ভালোবাসি। আমি আমার জীবন, বেঁচে থাকা নিজেই বেছেছি এবং তা নিয়ে আমার কোনো রিগ্র্রেট নেই। আর আমার প্রতিষ্ঠান বিরোধী ট্যাগও দরকার নেই। আমি দেখেছি গ্রাফিত্তির সাথে থাকা কত কেউ ভিড়ে গেছে প্রতিষ্ঠানে। গ্রাফিত্তি তাদের বাল বাচ্চার দায়িত্ব নিতে পারেনি। শুধু বিরোধিতার খানিকটা বিষ ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিল বলে তাদের কেউই সুখে সংসার করতে পারল না আজও। জীবনানন্দের সেই কবিতার মতো তারা এক গাছা দঁড়ি নিয়ে হেঁটে গেল। ঘুম কেন ভেঙ্গে গেল তার? এ প্রসঙ্গে আমাদের এসাথে থাকার দিনগুলো প্রায় কমিউন হয়ে ওঠা একটা অবস্থান মনে পড়ছে। একটা ডিম দু’ভাগ করে খাওয়ার মজাগুলো এবং আজ কে রাঁধবে তা নিয়ে কাজিয়ার তরজাগুলো। একজন লেখক কি রাঁধুনে হবে, সেসব প্রশ্নগুলোও

পথিকঃ শুভংকর দা। আগামিকাল করাতকলের একটা আড্ডা আছে। তাই পরের প্রশ্নগুলো পাঠাতে দেরি হচ্ছে। 
শুভঙ্করঃ ঠিক আছে।

কামরুল হুদা পথিকঃ সুবিমল মিশ্রের সাথে আমার দূর পরিচয় ঘটে ৯০ এর দশকে। তখন খুব একটা এ বাংলায় সুবিমল পঠিত নয়। কিন্তু দ্রষ্টব্য করতে গিয়ে সুবিমলের লেখার সাথে পরিচয় ঘটে আর আগ্রহ বেড়ে যায়। আমরা তখন লিটল ম্যাগাজিনের লেখকদের ক্রোড় পত্র করা শুরু করি। তারপর সুবিমল পড়া, সুবিমলের লেখা দ্রষ্টব্যে ছাপা, সুবিমলের সাথে পত্র যোগাযোগ, অতঃপর সুবিমল মিশ্র সংখ্যা করার চিন্তা ও বাস্তবায়ন। আমি ২ বার কোলকাতায় গিয়েছি একমাত্র সুবিমল মিশ্র সংখ্যার কাজ করার জন্যেই। তখন উনি আমাকে আপনার বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো। যাক সে কথা। আপনার কথামতে প্রকৃত প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক সুবিমল মিশ্রই। বাকিরাও কাজ করেছেন কিন্তু লেখক হবার জন্যে করেছেন। তাহলে সুবিমল মিশ্রই প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলনের মূখ্য মানুষটি? তার আগে বা পরে কারা কারা এ আন্দোলনকে অগ্রসর করেছেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ সুবিমল মিশ্র নিজেকে একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনে করতেন। আমি মনে করি না। কারণ প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা যদি আন্দলোন মনে করা হয় তাহলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেটা হতে পারে না। সুবিমল মিশ্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ম্যানিফেস্টো তৈরি করেছিলেন ঠিকই কিন্তু অনেকেই ছিলেন বা আছেন যারা প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করেছেন নিজের মতো করে কোনো ট্যাগ লাইন ছাড়াই। ফালগুনি রায় বলেননি তিনি প্রতিষ্ঠান বিরোধী। কিন্তু তার লেখা সেই বিরোধের কথাই বলে। তাকে হাংরিরাও সেভাবে দলে নেয়নি কিন্তু। তিনি বলতে পেরেছিলেন-আমি হতে চাই না রবীন্দ্রনাথ অথবা রঘু ডাকাত স্রেফ ফালগুনি রায় হতে চাই। এটা ভেবে দেখার। তার জীবন যাপন সেই বিরোধিতার কথাই বলে। হাংরি জেনারেশানের সুভাষ ঘোষও প্রতিষ্ঠান বিরোধী। শুধু লেখালিখি নয় তার যাপনও সে কথাই প্রমাণ করে। ফার্মাসিস্ট হয়েও মালিকদের বিরুদ্ধে গিয়ে ওয়ার্কারদের পক্ষ নিতে গিয়ে তার বহুবার চাকরি গেছে। লেদ মেশিনের কারখানায় কাজ জুটিয়েছেন ডাল রুটির জন্য। তো এরকম অনেক নাম করা যায় তবুএই ট্যাগের জন্যই সুবিমল থেকে যাবেন একমাত্র। ব্যাপারটা হাস্যকর কিন্তু খুব সত্যি। গদ্যকার অরূপ রতন বসুর নাম কেউ করবে না। তাকে ভুলে গেছে সবাই। এই স্বল্পভাষী মানুষটা লড়ে গেছে একা একা ঢাক না পিটিয়েই। তারপর চুপচাপ মারা গেছে, শেষ দিকটা ফাঁকা ঘরে মানুষের গলা শুনতে শুনতে। লোকে বলে মাথা খারাপ হয়ে গেছিল। আমি মানি না সে কথা। একটা ক্রিয়েটিভ মানুষ একা একা হতে হতে এরকম স্বপ্নের ভেতরেই চলে যায় বোধহয়। এনাকে কোন দলে ফেলবেন আপনারা। সুবিমলের ট্যাগ মারা সাইনবোর্ডের তলায় কী আঁটবেন তিনি? আর আরো যারা তরুণ যারা বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গাঁজা মদ মাদক নিয়ে এক অন্য রিয়্যালিটি খুঁজে পেল, সমাজ যাদের দূর করে দিলো। পুরে দিলো সোজা করতে কোনো রিহ্যাবে, জেলখানায়, বা তারা গিটার বাজাতে বাজাতে স্রেফ ভ্যানিস হয়ে গেল তাদের কথা কে বলবে স্যার? কোন ট্যাগে ট্যাগাবেন তাদের? সে অর্থে ওই সাইনবোর্ড আমি ফেলে দিয়েছি। অনেক তরুণই তাই করেছেন। আমাদের কোনো কনজারভেটিভ ট্যাগ চাই না আর। ওটা ফসিল হয়ে গেছে। জীবন বাদ দিয়ে ওই আঁতলামি আর সারাক্ষণ নিজেকে মহান ভাবার মিডল ক্লাস ন্যাকামো। 

কামরুল হুদা পথিকঃ অসাধারণ শুভঙ্কর দা। আমার নিজেরও একটা গদ্য আছে নিজেকে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়ার নামই প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলন। যেখানে নিজের অস্তিত্বই অনিশ্চিত সেখানে আর কারই বা অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনার বিষয় থাকে? বাজার যে ব্যাবস্থাপনাকে ব্যাবসায়িক স্বার্থে বাঁচিয়ে রাখে সেতো পণ্যসর্বস্বতা দিয়েই ঠাসা। যাক, এগিয়ে যান পরের প্রশ্নগুলোতে। 
শুভঙ্কর দাঃ আজ লিখছেন তো? 
শুভঙ্করঃ সোমবার থেকে আবার ধরব। কাল পরশু দু’দিন কলেজ স্কয়ারের লিটল ম্যাগাজিন মেলায় টেবিল সামলাব। 
কামরুল হুদা পথিকঃ  ঠিক আছে শুভংকর দা। আমি বাকি প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিবো 
কামরুল হুদা পথিকঃ শুভ সকাল দাদা। কেমন আছেন? 
শুভঙ্করঃ শুভ সকাল। খুব ঠা-া পড়েছে এখানে। 
কামরুল হুদা পথিকঃ একইভাবে আমাদের এখানেও। গতোকাল আমরা আড্ডা দিছিলাম ঢাকায়। আমি, সেলিম মোরশেদ ভাই, ঋষি এস্তেবান, শাফি সমুদ্র, কাওসার মাসুম, চারু পিন্টু, বিপ্লব বিপ্রদাসও ছিলেন। লিটল ম্যাগাজিন ও প্রতিষ্ঠাবিরোধিতা নিয়ে অনেক কথা। সামনের কাজ কর্ম। আমি থাকি ঢাকা রাজধানী থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. দূরে সাভারে। ফিরে এলাম রাত ১১ টার পর। তাও বইমেলায় আমাদের কাজ নিয়ে এগুচ্ছি। শুভঙ্কর দা, আপনার গ্রন্থসমূহ আর সম্পাদিত কাগজগুলোর নামগুলো দিবেন? শুভঙ্কর দা। বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে ফেলেন। আমি আরও কিছু প্রশ্ন পাঠাবো। সবগুলোর উত্তর হলে আপনাকে সবটা মেইল করে পাঠাবো। যাতে কোনো কারেকশন থাকলে করতে পারেন। 
কামরুল হুদা পথিকঃ শুভ সকাল দাদা। ভালো আছেন তো? 
শুভঙ্করঃ এইমাত্র আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসটা পাঠালাম রাজাকে। মানে গল্পটা তৈয়ার। শুভ সকাল। আজ থেকে ফের কাজ করার ইচ্ছে আছে। মুড নেই একটুও তবু চেষ্টা তো করতেই হবে। 
কামরুল হুদা পথিকঃ ঃ রাজা মানে কি যিনি গল্পটা দিবেন? তাহলে পাঠিয়ে দিতে বলেন। মুড ভালো নেই কেনো? দাদা কাজটা ভালো হচ্ছে। আরো কিছু প্রশ্ন আছে। আজ থেকে লিখে যান প্লীজ...
শুভঙ্করঃ হ্যাঁ। হা হা চিন্তা করবেন না। কথা দিলে সে কথা তো রাখবই। তাতো অবশ্যই। 
কামরুল হুদা পথিকঃ দাদা কলেজে আছি। কাল আমাদের সবার কথা হোলো। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা থাকলো 

কামরুল হুদা পথিকঃ  একজন একটা গল্প পাহালো। রাজর্ষি পি দাস। উনি কি? 
শুভঙ্করঃ কেমন মনে হলো?
কামরুল হুদা পথিকঃ ভালো। আমি আগামিকাল আপনাকে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন পাঠাবো। সব মিলে আমি ১৫/১৬ তারিখের মধ্যে ফাইনাল করতে চাই। প্লীজ , একটু চাপ হলেও পাঠাবেন।

কামরুল হুদা পথিকঃ আপনি এবং শর্মী পা-ে দু’জনই একজীবনে এসে গ্রাফিত্তি শুরু করেন। এ ছাড়াও যা যা করে আসছেন তার পেছনে কি সুবিমল মিশ্র কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে? আপনি তো উনার পরবর্তিতেই শুরু করেছেন। আপনার ১৮০ ডিগ্রী কিংবা অন্যান্য কাজগুলো করার মধ্য দিয়ে কি নতুনদের মধ্যে একটা সাঁকো তৈরির চেষ্টা ছিলো? অনেকে এসেছে, অনেকে গিয়েছে, এ অভিজ্ঞতাটাই বা কি রকম? তখন কি বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ এমনিতেই হয়েছিলো? যদি বলি আজ ২ যুগ পার করে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলনকে কি ভাবে দেখছেন? কতোদূর দেখছেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ আমার আর শর্মীর একসাথে আসার কারণও ছিল একসাথে কাজ করবার মানসিকতা। সুবিমল মিশ্র আমাদের দুজনকেই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। অতয়েব প্রভাব ছিলই। যা পরে সুবিমলদার সাথে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কেটেছে আস্তে আস্তে। দূর থেকে একটা মানুষকে দেখা আর কাছ থেকে একজনকে দেখলে যে তফাৎটা ঘটে সেটাই ঘটেছিল আরকি। ১৮০ ডিগ্রি আমার কাগজ নয়। অনেক তরুণ অভিষেক চক্রবর্তীর। আমার বন্ধুরা আসলে সবাই তরুণ। আমার বয়সী সমস্ত লোকজন বড় বেশি বুড়িয়ে গেছে মানসিক ভাবে। আর নিজেকে পাল্টাতে চায় না কেউ। আমি শিখি সারাক্ষণ এই তারুণ্যের কাছে। ওরা কী ভাবছে সেটা না জানলে আমি কীকরেই বা লিখব। সমাজটা দ্রুত পালটে যাচ্ছে। সেটা বুঝতে না পারলে ধরতে না পারলে ওই একই প্যাঁচাল সারা জীবন চালিয়ে যেতে হবে। যেটা একজন জীবিত লেখকের না করাই কাম্য। যাওয়া আসা চলতেই থাকে। এটাই নিয়ম। এটা মেনে নিতে খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। কিন্তু আমি লক্ষ্য করেছি যারা আমাদের সাথে একবার ঘর করেছে তাদের ভেতর বিষ ঢুকেই পড়েছে কম বেশি। তারা কেউ কেউ মার্কেটে নামটাম করেছে হয়ত কিন্তু কোথাও একটা স্মৃতির তাড়না রয়ে গেছে। একটা কুরে কুরে খাওয়ার বেদনা, প্রবণতা। স্বাধীনতার স্বাদ যে একবার পেয়েছে সে কী আর বকলেস পরে থাকতে ভালোবাসবে বেশিক্ষণ? আমি কাউকে কিছু বলি না। আগে খিস্তি করতাম এখন বুঝেছি যে ডুডু আর তামাক যে খাবে তাকে আঁটকানো যাবে না কোনোদিন। আসলে সামাজিক প্রতিষ্ঠা একটা ব্যাপার। বৌয়ের কাছে অন্তত সে হিরো হতে চায়। আমাকে তো সেদিন একজন মহিলা বললো আমি ভিখিরির মতো কেন থাকি? তাকে কী উত্তর দেবো আমি? সে কী বুঝবে আমার ভালো থাকা আর তার ভালো থাকার কারণ এক নাও হতে পারে। কীভাবে যেন আমাদের লেখাপত্র কাজকারবার ছড়িয়ে গেছিল বাংলাদেশেও। আমার ডাকে পাঠানো পত্রিকার কারণেও তা হতে পারে বা অন্য কারণও থাকতে পারে। সেলিমের সাথে আলাপ কোলকাতা বইমেলাতে। খসরু ভাইয়ের সাথেও তাই। প্রাথমিক ভাবে সে আলাপ খুব কিছু জমে ওঠেনি। পরে সেই আমার পরম বন্ধু হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আন্দোলন যাতে অ্যাঁড় দোলন না হয়ে ওঠে সেটা দেখা কর্তব্য যারা এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত তাদের। ডুডু ও তামাক একসাথে খাওয়া চলে না। খেলে আরেকটা সুবিমল পয়দা হয় এবং সেটা কাম্য নয় আদৌ। ছোটো ছোটো প্রকাশনা গড়ে ওঠা উচিৎ যা এতদিনে তৈরি হচ্ছে এখানে। যারা এই বিরোধীদের বই ছাপবে। পাঠকের কাছে পৌঁছনোর ভার নেবে। কতক্ষণ আর একজন লেখক নিজের বই ঘাড়ে করে ফেরি করবেন? তারপর আমরা আশা করব তিনি বড় কাজ করবেন আমাদের জন্য। আসলে সামনের পথটায় প্রচুর সম্ভাবনা কিন্তু কাজটাও তো করতে হবে। শুধু খেস্তাখিস্তি করে লাভ নেই। এসব যখন লিখছি ঠিক তখনই মনে পড়ছে সামনের শনি ও রবিবার ভারত ভবনের লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে বই ফিরি করতে যাব আমি। যে মেলাটা সরকারী মেলা বয়কট করে আমাদের পাল্টা মেলা। মানে দাঁড়াল এই ৫৪ বছরেও নিজের বই নিজে বিক্রি করি আমি। করে আনন্দ পাই। পাঠক এখনো বলে- ‘আচ্ছা লিটল ম্যাগাজিন ব্যাপারটা কী?’ সুবিমলদা উত্তর দিয়েছিলেন একবার, তখন তিনিও আমার টেবিলে-‘অ্যাত সেজেগুজে থাকলে বোঝা যাবে না’। এটা লেখকের হেক্কার হয়ত। কিন্তু সেই মহিলা আর কোনোদিন লিটল ম্যাগাজিনের ধারে কাছে যাবেন কী? ভাবতে হবে, ভাবা প্র্যাক্টিস করা দরকার। 


কামরুল হুদা পথিকঃ আমি যদি কীর্তিবাস হয়ে বিজ্ঞাপনপর্ব হয়ে গ্রাফিত্তি এবং তৎপরবর্তি লিটলম্যাগাজিন ও প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার একটা ধারাবাহিক চর্চা, অগ্রগতি কিংবা ব্যার্থতার একটা ইতিহাস শুনতে চাই, তাহলে কিভাবে আপনি বলবেন? সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনপর্ব ও সুবিমল মিশ্র বিষয়ক যে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ তা যদি স্পষ্ট করে বলতেন... 

শুভঙ্কর দাশঃ কৃত্তিবাস নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। প্রতিষ্ঠানে লিখতে লিখতে একটা শ্বাস ফেলার অবস্থান তারা খুঁঁজছিলেন হয়ত। যা ভেঙ্গে জন্মাবে হাংরি জেনারেশান। যারা এসেছিলেন কৃত্তিবাস থেকে তারা পুলিশি চাপের পর অনেকেই ছেড়ে যাবেন হাংরি জেনারেশান মুভমেন্ট। এটা সবার জানা ওই সময় লেখালিখির জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনেকে। কোর্টে কেস চলেছিল বহুদিন। কেউ কেউ পুলিশের কাছে মুচলেখাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওটা বহিরঙ্গ মুচমুচে খাস্তা বলে পাঠক খেয়েছে বেশি। হাংরি জেনারেশনের সঙ্গে অন্য যে কোনো সাহিত্য আন্দোলনের মূল তফাত এইখানে যে, তেমন কোনো দার্শনিক ভিত্তিভূমি থেকে এই আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। মলয় রায়চৌধুরী যদিও বলেছেন হাংরি শব্দটাই তিনি নিয়েছিলেন চসারের ‘হাংরি টাইমস’ থেকে এবং অনেকের মধ্যে এ ধারণা রয়েছে যে হাংরি জেনারেশনের মূল চিন্তাসূত্র এসেছে বিদেশ থেকে। সমস্ত আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনগুলোর একটা কেন্দ্র থাকে, থাকে ভাবনার একটা নির্দিষ্ট ফ্রেম কিন্তু হাংরি জেনারেশন আন্দোলনের এরকম কোনো ভাবনা ছিল না। কেন্দ্রচ্যুতিই এই সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ। তাই শৈলেশ্বর ঘোষ লিখেছিলেন, ‘আধুনিকতা নাম্নী হিজড়েটিকে আমরা চুম্বন করতে পারিনি। ঐ সালঙ্কারা হিজড়েকে নিয়ে কবিতা লেখকদের লোফালুফি আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমাদের সৃষ্টি-লিঙ্গ চেয়েছে নারী, যার সৃষ্টিযোনি আছে। আমরা এই হিজড়েকে আরো দেখেছি নপুংসক, দাঁতাল, হৃৎপি- খেকো প্রতিষ্ঠানের কোলে বসে থাকতে। আধুনিকতা রক্ষিতা হবার সমস্ত শর্তই পূরণ করেছে। সে আর বিপ্লবী কবি লেখক শিল্পীর প্রেয়সী নয়। তৃতীয় স্তরের পপ কবি লেখকদের আরাধ্যা সে’। হাংরিরা টের পেয়েছিলেন যে আধুনিকতার একদিকে যেমন রয়েছে নবজাগরণ, এনলাইটেনমেন্ট তেমনি অন্যদিকে রয়েছে ডিহিউম্যানাইজেশনের প্রক্রিয়া। বিশ্বব্যাপী ধনতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার পদ্ধতি। তার বিরোধ তারা তাদের লেখালিখি দিয়ে করে গেছেন। আমার কাছে তাই তারা অনেক বেশি রেলিভেন্ট। আর সুবিমলদা আর বিজ্ঞাপন পর্বের ঝামেলা ঝগড়া নিয়ে আমার বলা সাজে না। এটা একান্ত তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার স্যাপার, তরজা। আমরা এসব দেখছিলাম দূর থেকে কখনো লেখকদের সাথে গা ঘঁষাঘষি করেও। ছোটবেলা থেকেই লাল নীল মাছ পোষার শখ ছিল আমার। বড় হয়েও সেই বাই মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠত। অতএব বেড়ে চলেছিল একোরিয়ামের সংখ্যা। ত কোনো কারণে একটা থেকে জল পড়তে শুরু করল। একোরিয়াম খালি করে মেঝেতে নামিয়ে রাখা হলো। আর আমি ঠিক ভুলে গিয়ে পা চালিয়ে সেটা ভাঙলাম। পা কেটে গেল অনেকটা। তুলোতে ডেটল দিয়ে চেপে বেঁধে দিলাম। পরের দিন সকাল ৯ টা বেজেছে কি বাজেনি দরজায় কড়া নড়ে উঠল কড় কড়। কেরে এত সক্কাল সক্কাল? দরজা খুলে দেখি সুভাষদা। আমাদের ডিয়ার সুভাষ ঘোষ। ‘কিরে ডাক্তারের কাছে গেছিলি? জানি তো যাবি না। তাই দেখতে এলাম তোকে’। লোকটা আমাকে দেখতে এত সকাল সকাল চলে এসেছে চন্দননগর থেকে। এই ছিল আমাদের সুভাষ ঘোষ যাকে আজও মিস করি আমি। হাংরি লেখকদের মধ্যে এ কারণেই তিনি ছিলেন আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ। সুভাষদার কথা বলা পুরো হয় না যদি না কনকদির কথা বলি। কনক ঘোষ। সুভাষদার স্ত্রী। বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেই সুভাষদা বলতেন কনক ঘোষ সুভাষ ঘোষ, বাউরি পাড়া, চন্দননগর। কত কত বইমেলাতে টিফিন বাক্স ভরতি করে লুচি আর মাখা মাখা স্বর্গীয় সেই ডিমের তরকারি আমাদের সবার জন্য আনতেন কনকদি। আর আমরা লোভার মতো বসে থাকতাম সেই টিফিনের অপেক্ষায়। বই ছেপে তখন আমরা ফতুর, মেলাতে অত দাম দিয়ে খাবার কেনার পয়সা আমাদের হাতে থাকত না। যা বিক্রি হতো তা দিয়ে প্রেসের ধার দেনা মেটানো হতো। সেই অভ্যেস এখনও রয়ে গেছে। পয়সা থাকলেও পারতপক্ষে মেলার মাঠের খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। সুভাষদা নেই। কনকদিও আর আসেন না মেলাতে। আমি এখন নিজেই বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যাই আর ভাবি এই ট্র্যাডিশান যদি তরুণদের ভেতরেও ছড়িয়ে দেওয়া যায়। যদি তারা বোঝে এই ভালোবাসার ভাইরাসের কথা। স্মার্টনেসের অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে তারা যদি পুরোন জং ধরা ভালোবাসাকে ভালোবেসে ফেলে এই কর্পোরেট কালচারে। এটুকু শুনে শর্মী বললো- ‘কিছু কিছু জিনিসের উত্তরসূরি হয় না। আজ আর কেউ বোকা হতে চায় না। কারণ বোকা হতে গেলে অনেকটা সাহস আর হৃদয় লাগে’। 

গ্রাফিত্তি বেরোনর আগে যে কাগজগুলো বের করেছি সেগুলো হলো ‘সমবেত আর্তনাদ’, উত্তরপর্ব, এই বিষ অর্জন। শর্মী করছে ‘আর্বাচিন’, রাজা করছে ‘বীতিহোত্র’। তারপর সব বন্ধ করে আমরা ঠিক করলাম গ্রাফিত্তি করব। আমি আসলে ব্যক্তির নিজস্ব ভয়সে বিশ্বাস রেখেছি। কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া আমার না পছন্দ। গ্রাফিত্তি কাউকে কবিতা শেখাতে যায়নি বা লেখা শেখাতে। কারণ আমরা জানতাম কাউকে লেখা শেখান যায় না। তাকেই তার কণ্ঠস্বর খুঁঁজে নিতে হবে। আমরা একটু ধরতাই দিতে পারি মাত্র। আমরা আস্থা রেখেছি ছোটো ছোটো কাগজে। জেরক্স অফসেটে ছাপা একটা ভাঁজ করা কাগজও আমাদের কাছে অচ্ছুৎ ছিল না। সমানে কাজ করে যাওয়াটা জরুরী। তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, এই ছোটো কাগজগুলোই ছিল আদান প্রদানের উপায়। আর পেট মোটা কাগজ করতে গেলে যে অর্থ লাগে তা আমাদের কাছে ছিল না। যখন থাকত আমরা তা দিয়ে বই ছেপেছি। আমরাই ছেপেছিলাম সাল্অভাদোর দালির ‘বাতকর্মের আর্ট’। ‘আমার গোপন জীবন’। এরকম বহু কাজ। গ্রাফিত্তি বই থেকে ফিল্ম থেকে থিয়েটার থেকে ভাস্কর্য থেকে নানা ফিল্ডে কাজ করেছে। সমস্তটা ডকুমেন্টেড নেই। কিছু আছে। বাকিটা খুঁজে নিতে হবে। 

কাহুপঃ শুভঙ্কর দা। কিছু নতুন প্রশ্ন করতে চাচ্ছি। 

শুভঙ্করঃ নায়ীম তখন পড়ছে কোলকাতায়। বাংলাদেশে মূল বাড়ি। আমার কাছে থাকত পেয়িং গেস্ট। ও আর শান্তনু মিলে একটা কাগজ করত নাম ‘ভাট’। একটা মজাজিন। আমার দারুন লাগত কাগজটা। অনেকটা ম্যাড-এর আদলে। যেখান থেকে পুরন্দর ভাটের সৃষ্টি হবে অনেক পরে। আমি সেটাই বিশ্বাস করি। 

কামরুল হুদা পথিকঃ প্রমথ চৌধুরীর সবুজ পত্র, বুদ্ধদেব বসুর শনিবারের চিঠি, আব্দুল্লাহ আবু সাইদের কণ্ঠস্বরসহ বহু লিটল ম্যাগাজিন হয়েছে যারা নিরীক্ষা ও নতুন লেখা তৈরি করতে ভূমিকা রেখেছেন যদিও তাদের নির্দিষ্ট কোনো আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন ছিলো না, তারপর ১৯৬১ এর দিকে এসে হ্যাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেন সমীর রায় চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং দেবী রায়সহ আরো অনেকে। কিন্তু তাদের মধ্যেও দারিদ্র্য ক্ষুধা ক্ষুতকার এসবের আত্মমুখি একধরনের চিৎকার যেখানে পুঁঁজি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট, পণ্য ও পণ্যায়নের চিন্তার বিকাশ বা কোনো কিছু বয়কট করার দর্শন ছিলো না। প্রতিষ্ঠানবিরোধী মুভমেন্ট এসে বয়কট করলো পুজিনির্ভর লেখক ও লেখার যায়গাগুলোকে আর বাজারী ব্যাবস্থাপনার বিরুদ্ধে এক সোচ্চার বা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। তো আপনি কল্লোল-হ্যাংরি-প্রতিষ্ঠানবিরোধী মুভমেন্ট এর মধ্যে কি সমান্তরাল ধারা না স্তরীভূত ধারা লক্ষ্য করেন? যদি বিস্তারিত বলেন।

শুভঙ্কর দাশঃ বুদ্ধদেব বসুর কাগজটার নাম ছিল ‘কবিতা’ পত্রিকা। মূলত কবিতা নির্ভর কাগজ যেখানে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে প্রথম লেখালিখি শুরু হয়। বুদ্ধদেব বসু ছিলেন একজন অ্যাকাডেমিশিয়ান। এবং তার প্রচুর কাজ আছে। মহাভারতের কথা মূল্যবান একটি বই। তাকে ঘিরে ছিলেন একদল রবীন্দ্র বিরোধী দল। রবীন্দ্রনাথকে পেরিয়ে তারা আধুনিক কবিতার কথা বলেছেন। বোদলেয়ারের কবিতা বাংলায় অনুবাদ প্রথম তিনিই করেন। আমেরিকায় গ্রিনউইচ ভিলেজে তার দেখা হয়েছিল গিনসবার্গের সাথে। সম্ভবত তখন ‘হাউল’ বেরিয়ে গেছে। কিন্তু বুদ্ধদেব বসু এদের লেখা ধরতে পারেননি। তার ক্লাসিকাল পড়াশোনায় এটা বুঝতে পারা অসুবিধে ছিল। তার জন্য তাকে আমি খাটো করছি না। অগ্র্রজরা সবসময় বুঝতে পারেন না তরুণদের। বা ধরতে পারেন না সময়ের বাঁক বদল। তবু মনে রাখতে হবে নোবেল লরিয়েট রবীন্দ্রনাথের বিরোধিটা অতটা সহজও ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ততদিনে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছেন এবং তাকে নিজের অবস্থান বাড়িয়ে সে জায়গায় নিয়ে যেতে হয়েছিল যেখান থেকে কথা বললে তার কিছু মূল্য থাকে। ষাটের দশকে কর্পোরেট? তখনও তো জুট মিলগুলো বন্ধ হয়ে মাল্টিস্টোরিড হাউসিং তৈরি হয়নি। তখনো আধুনিক মেশিন যা চালাবে হোয়াট কলার-রা ঢুকে পড়েনি ফ্যাক্টিরীগুলোয়। তখনও লেবার বলে একটা বস্তু ছিল। এই আধুনিক যুগ মার্ক্সও ভেবে যাননি। ভেবে যাননি জাস্ট বোতাম টিপে যারা মেশিন চালাবে তারা পড়বে কোন শ্রেণি সংজ্ঞায়? খাদ্য আন্দোলনের সময় এই হাংরিরায় অনেকে হেঁটেছেন মিছিলে। আমরা তা জানি অথবা জানি না। শুধু মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে হাংরি আন্দোলন ভাবলে ভুল হবে। ইতালিয়ান একটি মেয়ে ড্যানিয়েলা যে পিএইচডি করছে হাংরি মুভমেন্টের উপর হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে তার সাথে কথা হচ্ছিল। তারও এইসব ভুল ভাবনা ছিল। অর্থাৎ হাংরি মুভমেন্ট মলয়সেন্ট্রিক। তা একদমই নয়। নেট নির্ভর এই জ্ঞানের জগতে এই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কারণ বাকিরা প্রায় কেউই নেটের দুনিয়ায় নেই। হাংরিদের কাজ কিন্তু বাজারের বিরুদ্ধাচরণ করে। তাদের ঘোষিত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ম্যানিফেস্টো না থাকলেও তারা যে বিরোধী এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাদের আক্রমণ লেখা দিয়ে। ‘লেনি ব্রুস ও গোপাল ভাঁড়কে’ লেখার ধক কোনো বাজারী মালের কোনোদিন হবে না বা ‘ডঃ ওয়াং-এর গোপন সংকেত’ যা হাংরি বাসুদেব দাশগুপ্ত লিখেছিলেন। হাংরিরাও বয়কট করেছে বাজারী কাগজের লেখকদের। সবাই হয়ত নয় কিন্তু তাতে অন্যান্যরা অচ্ছ্যুত হয়ে যায় না। 

কামরুল হুদা পথিকঃ সুবিমল মিশ্র বা তার আগেই যদি কেউ আমাদের এই প্রতিষ্ঠানববিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত করে থাকেন, যাকে আমরা পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার সর্বগ্রাসী থাবা থেকে শিল্প সাহিত্যকে মুক্ত রাখতে পরবর্তিতে কাজ করছি। প্রচলিত ধ্যান থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছি, শিল্পের কোনো দাসত্ববেরি থাকবে না, বেনিয়াবৃত্তি থাকবে না। প্রায় ২ যুগ পর আপনি এর কতোটুকু অর্জন হয়েছে বলে মনে করেন কিংবা তার ভবিষ্যত নিয়ে কি বলবেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ এবার তাহলে আমার বই ‘দেশী মুরগী, এই গরু হ্যাট’ থেকে কতগুলো জায়গা তুলি দি। পুরো ব্যাপারটা তাহলে কিছুটা খোলতাই হয়। ‘নম হে রামকৃষ্ণ। যে ভাষা খুঁঁজি শিখিবারে পাই তাতো তোমাতেই। যারই শাঁস, তারই বীচি, তারই খোলা। ওজনের সময় শাঁস, বীচি, খোলা সব নিতে হবে। তবু কারো কারবার শাঁস নিয়ে, কারো বীচি নিয়ে, কারো খোলা নিয়ে দিন চলে যায়। আমরা তো চাষি হে, ক্ষুধার তাড়না দেখিয়াছি। শাঁস, বীচি, খোলার মর্ম আমাদের জানা ছিল, তাই বোঝা ছিল। এই তেজ মধুতে বর্তে ছিল, মাইকেল-এ। ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ আমরা ভুলে গেছি তবু। ভাষার শ্রেণিচেতনা হারানোর সেই শুরু। প্রতিটি শ্রেণিরই আছে নিজস্ব ভাসা, নিজস্ব ভাব বিনিময়। একান্ত আপন ডিকশন। অতএব যদি লিখি এই সমাজব্যাবস্থায় শিক্ষা আমাদের মাত্রা বেঁধে দেয় অথবা বাধ্য করে স্থিতাবস্থা সংরক্ষণের, খুব ভুল হয়ত হবে না। অর্থাৎ আমরা লিখি নিজস্ব শ্রেণির জন্য নিজস্ব ভাষাতে, যা থেকে যাচ্ছে স্বপ্নে, বিপ্লবের ইগো স্যাটিসফ্যাকশানে শুধু, এই ভাষা? গুলিয়ে ফেলার এই নিশ্চিত পদ্ধতি যদি ভেঙে দেওয়া যায়, যদি বলে দেওয়া যায় ডিমারকেশানের চড়া দাগে যে প্রতিষ্ঠানের ভাষা আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ভাষা আলাদা, তবেই এই লেখা শুরু হতেপারে। নিজেকে আক্রমণের অর্থই ভাষাকে আক্রমণ। নিজের অবস্থানের বিরুদ্ধে লড়তে লড়েত এই এগোনো, এই চিৎকার। আধুনিক ইতিহাসে ফ্রান্সের ১৮৩০-এর বোহেমিয়ান সমাজই হয়ত প্রথম প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা ভেবেছিল। নিজস্ব জীবনযাপন, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক আলাদা অবস্থান ছিল এই সমাজের। এর মূল অংশ জুড়ে ছিল ছাত্ররা এবং স্কুল কলেজে নাম কাটা যাওয়া বিদ্রোহীরা। অনেক সময় যারা কমিউন করেও থেকেছে। এরা কথা বলত নিজেদের তৈরি একটা ভাষায় যা প্রধানত তৈরি হয়েছিল বুর্জোয়াদের ধাঁধায় ফেলে দেওয়ার জন্য। এটা তাদের বাবা-মা’র ক্ষেত্রেও তারা সমানভাবে ব্যবহার করত, যাদের তারা বুর্জোয়ার বেশি কিছু ভাবতে রাজী ছিল না। এদের সাথে সচেতন ভাবে পৃথিবীজোড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার শুরু ১৯৬০-এ তার (জামাকাপড়ের সচেতন ব্যবহার বা কাউন্টার ফ্যাশন অবধি যা বিস্তৃত) কিছু মিল হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে। তরুণ ফরাসীদের বই, ছবি তখনও যথারীতি কেউ কেনেনি, প্রতিষ্ঠানের রকমফের প্রশাসনিক শক্তি, গুপ্ত হাত তাদেরও পিষ্ট করেছে। কেউ কেউ রিপ্রেশন সহ্য না করতে পেরে ফিরে গেছে পুরোনো সমাজে, কেউ কেউ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু লড়াইটা যে শেষ হয়নি তা ১৯৬০ থেকে এই কয়েক দশক জুড়ে চলা বিরোধিতায় স্পষ্ট প্রমাণিত। পঞ্চাশ ও ষাটের বিরোধী শিল্পীদের আবির্ভাব বেল কিংবা ব্রাকের পর্যবেক্ষণে অনেকটা যেন মর্ডানিজিমের প্রাথমিক নিহিলিস্ট কিংবা নৈরাজ্যবাদী পর্যায় মনে হলেও পরে তাকে মানে থেকে বোদলেয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত আধুনিক আন্দোলনের উত্তরাক্ষই বলা যাবে। এবং তা জীবনানন্দ পরবর্তী আধুনিক আন্দোলনের আরেক নতুন পর্ব নিশ্চয়ই। কমিউন, অ্যান্টিওয়ার, কাউন্টার কালচারের ইস্থেটিকস নিয়ে তর্কবির্তক ছিল এবং সেটা হওয়া ছিল সব থেকে সঠিক, কারণ বুর্জোয়া শোমাজেড় বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে গেলে তাদের তৈরি ইস্থেটিকসের বিরুদ্ধাচরণ তাকে করতেই হবে। কারণ কোনো স্বাধীন শিল্পীই কোনো চাপিয়ে দেওয়া ইস্থেটিকস নিয়ে চলতে পারে না। তাই চিন্তার পদ্ধতিগত পরিবর্তনও একটা বড় ব্যাপার আমাদের কাছে। ‘থিয়োরি অফ দা আভাঁগার্দ’ বইতে বার্জার বলেন, ঐতিহাসিক ইউরোপীয় আভাঁগার্দ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠান শিল্পের (ইন্সটিটিউশন আর্ট) স্বায়ত্তশাসন মতাদর্শ আক্রমণ করা, তাকে উপেক্ষা, কখনো কখনো রূপান্তর করা। তাই সুবিমল আকাশ থেকে পড়েননি। এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। কারণ সমস্ত লেখক শিল্পী চিন্তাবিদ স্বাধীনতাকামী। সমস্ত রিপ্রেশনের মধ্যেও এটা ঘটবে। 

কামরুল হুদা পথিকঃ আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আপনার বেশ কিছু অনুুবাদ কর্ম এবং প্রতিষ্ঠানববিরোধী আন্দোলনের কথা জানলাম যা বাংলা ভাষার বাইরে অন্যান্য দেশে হচ্ছে। যাদের অনুবাদ কাজগুলো করছেন বা করবেন তাদের এবং তাদের এলাকার প্রতিষ্ঠানবিরোধী মুভমেন্ট নিয়ে একটু বিস্তারিত জানতে চাই, যা পরবর্তি প্রজন্মদের কাছে খুব গুরুত্ত্ব পাবে। সফলতা কিংবা বিফলতা বলতে আমাদের আন্দোলনে নেই তা আমি জানি বা ভাবি কিন্তু শিল্প সাহিত্যকে তার পুঁজি বা বাজার নির্ভরতার জাল থেকে মুক্ত করে নতুন অপ্রচলিত ও ব্যাবসা সফল তকমা ছাড়িয়ে অবমুক্ত করার কাজটিই আমরা করি। শিল্প সাহিত্য কোনো বেনিয়া পণ্য নয় তাই তাকে রসনা বিলাসের উপযোগী করে পরিবেশনের কোনো পথ নেই। তার নিরীক্ষা, দেশ কাল ইতিহাস, তার প্রতিবাদ কিংবা তাকে তার মতো করে এগিয়ে যেতে দিতে হয় যা বাজারে বিকোবে না, জনপ্রিয়তাতো দূরের কথা। অন্যান্য দেশের এলাকার আলোকে জানতে চাচ্ছি।

শুভঙ্করঃ The ideas of the ruling class in everz epoch are the ruling ideas, i.e. the class which is the ruling material force of society is at the same time its ruling intellectual force. The class which has the means of material production at its disposal has control at the same time over the means of mental production, so that generalize speaking, the ideas of those who lack the means of mental production are subject to it. The ruling ideas are nothing more than the ideal expression of the dominant material relationships grasped as ideas, hence of the relationships which make the one class the ruling class, therefore the ideas of the dominance. (Marx and Engels)  প্রত্যেক সমাজেই থাকে একটি প্রভাবশালি ক্লাস এবং তারা চেষ্টা করে অন্যান্য ক্লাসের চেতনায় তাদের ইডিওলজি আধিপত্য এবং প্রভাব বিস্তারের। বুর্জোয়া ইডিওলজি এই শাসন করার শক্তি অর্জন করেছে। বৈজ্ঞানিক ও টেকনোলজিক্যাল উন্নতি সারা পৃথিবীতে কমিউনিজমের প্রতিদ্বন্দ্বিরূপে নিয়ে এসেছে কনজিউমারিজমকে। যে কোনো সামাজিক বিপ্লব প্রতিহত করার সমস্ত কৌশলই এখন এদের আয়ত্তে। অতিস্থুল কৌশল যেমন আর্মি, পুলিশ, গোয়েন্দা, গু-াবাহিনী নিয়োগ এবং অতিসূক্ষ্ম যেমন প্রধানত বুদ্ধিজীবী মহলে উদারতার বুলি আওড়ে, এমন কি মার্ক্সবাদীর গণতান্ত্রিক মুখোশ পরে অনুপ্রবেশ, এছাড়াও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পন্থা, কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার, ল্যাবরেটরি কালচারড বিভিন্ন রোগ। ইনফ্রাসাউন্ড, মানুষের মানসিক শক্তিকেই যা মেরে ফেলে। মগজ দুর্বল হয়ে পড়ে। দুই আর দুইও যোগ করা সম্ভব হয় না। নিয়ন্ত্রণের রকমফের নিয়ে কথা বলতে গিতে বারোজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন প্রাচীন মায়াসভ্যতায় এমন একটি ক্যালেন্ডার ছিল যা নিয়ন্ত্রণ করত প্রতিটা দিন লোকজন কী ভাববে, কী অনুভব করবে। এই মডেলের ছকটি বুঝলে আধুনিক নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিও বোঝা যাবে। এই ক্যালেন্ডারের জ্ঞান ছিল শুধুমাত্র পুরোহিতদের সম্পত্তি যারা নিজেদের সামাজিক পদমর্যাদা রক্ষা করত খুবই সামান্য কিছু পুলিশ এবং যোদ্ধাদের দিয়ে। পুরোহিতদের তাই শুরু করতে হয়েছিল যথার্থ একটা ক্যালেন্ডার দিয়ে। একটা বছরের ৩৬৫ দিন ভাগ করা ১৮ মাসে। প্রতি মাসে ২০ দিন করে। শেষ ৫ দিনকে মনে করা হতো দুর্ভাগ্যসূচক এবং হতোও তাই। পুরোহিতদের এই যথার্থ ক্যালেন্ডারটির দরকার ছিল নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। মায়াসভ্যতার লোকজনকে প্রায় পুরোপুরি নির্ভর করতে হতো ভুট্টার উপর এবং তাদের চাষের পদ্ধতি ছিল কাটা আর পোড়ানো। ঝোপজঙ্গল কেটে তারপর শুকিয়ে পোড়ানো হতো। তারপর চাষ হতো। এদের লাঙ্গল ছিল না এবং লাঙ্গল টানার জন্য কোনো পোষা জীবজন্তুও ছিল না। যেহেতু মাটির অল্প নিচেই ছিল পাথরের আস্তরণ সেহেতু লাঙ্গল কোনো কাজেই আসত না। তাই আজ অবধি এখানে এভাবেই চাষ হয়। এই কাটা আর পোড়ানো পদ্ধতিতে চাষবাসের জন্য দরকার হয় সঠিক সময়জ্ঞানের। ঝোপজঙ্গল কেটে তাকে শুকনো করার জন্য সময় দিতে হবে। এবং বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই এটা করতে হবে। কয়েকদিনের ভুল গণনা এক বছরের ফসল নষ্ট করে দিতে পারে। চাষবাসের জন্য তৈরি এই বছরভোর ক্যালেন্ডার ছাড়াও তাদের ছিল ২৬০ দিনের পবিত্র এক পঞ্জিকা। যাতে ছিল ১৩টা উৎসব প্রতিটা ২০ দিনের। এত উৎসব বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে সাথে গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া, কখনো নরবলিও হতো। এইভাবেই পুরোহিতেরা ঠিক করে রাখতেন কী ভাবে একটি নির্দিষ্ট দিনে লোকেরা কী করবে, কী দেখবে, কী শুনবে। ভবিষ্যতে কী হবে তা বলার পক্ষে এটুকুই যথেষ্ট ছিল অথবা অতীতকে গুছিয়ে নেওয়ার পক্ষেও। তৃতীয় আরো একটি গোপন ক্যালেন্ডার ছিল যা জনসাধারণকে উৎসবের আড়ালে একজন স্টেজ ম্যাজিসিয়ানের মতোই দ্রুত কথা আর জমকালো প্রদর্শনীর ফাঁকে যেভাবে তাদের নড়াচড়া তারা ঢেকে রাখে। দর্শকদের কাছে সেভাবেই এই ক্যালেন্ডার নির্ভুলভাবে পর্যায়ক্রমে নির্ভরশীল করে তুলেছে তাদের। নানারকম ভাবে এই নির্ভরশীলতা সক্রিয় করা যায়। সব থেকে সহজ পদ্ধতি হলো ওয়েকিং সাজেশন। (Waking suggestion is a technique for implanting verbal or visual suggestions which take direct effect on the autonomic nervous szstem because the subjectÕs conscious attention is directed somewhere else.)  এই ক্যালেন্ডারকে যদি আধুনিক জীবনের মাস মিডিয়ার সাথে মেলানো যায় তাহলে দেখা যাবে খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা একটা আনুষ্ঠানিক ক্যালেন্ডার ছাড়া আর কিছুই নয় যা জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বুদ্ধিমান পুরোহিতেরা লুকিয়ে আছে পরস্পর বিরোধী প্রচুর তথ্যের পেছনে এবং তাদের অস্তিত্বের কথাই তারা অস্বীকার করছে জোর গলায়। মায়ার পুরোহিতদের মতো এরাই ঠেকা নিয়ে বসে আছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের। আপনার কনভেন্টে কিংবা সমতুল্য কোনো খাঁচায় বেড়ে ওঠা পুত্রটিও, আপনার ফ্যাসানসর্বস্ব স্ত্রী-র মতো মিডিয়াগুলোর শিকার। শিকারের কেলাসন। মায়া ক্যালেন্ডারের মতোই এদের কাজকর্ম, জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করছে এই পুরোহিতেরা। এই মাস মিডিয়া ক্যালেন্ডারের নবতম সংযোজন সাইবার স্পেস বা আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর গঠিত নতুন শব্দ ‘ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে’। ১৯৬০ সালে আমেরিকার মিলিটারীর তৈরি অজচঅঘঊঞ (অফাধহপবফ জবংবধৎপয চৎড়লবপঃ অমবহপু ঘবঃড়িৎশ) কম্পিউটার, রেডিও আর স্যাটেলাইটের ভেতর একটা সংযোগ স্থাপনে সফল হয়। যুদ্ধের সময় যদি কিছু সংযোগ পদ্ধতি নষ্টও হয় তাহলেও যাতে কাজ চালিয়ে যাওয়া যায় এরকম একটা নেট ওয়ার্ক তারা তৈরি করেন এবং এটাই সাইবার স্পেসের প্রথম পদক্ষেপ। অনেকে অবশ্য অন্যভাবেও ভেবেছেন যে শহড়ষিবফমব ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ রিষষ হড়ঃ নব ঢ়ড়বিৎ রভ ঃযব রহঃবৎধপঃরাব, ধপপবংংরনষব, ঁহপড়হঃৎড়ষষধনষব ধংঢ়বপঃং ড়ভ ঃযব রহঃবৎহবঃ ভষড়ঁৎরংয. সেটা অবশ্য কতদিন করতে দেওয়া হবে সেটা ভাববার। সাইবার কাউন্টার কালচারের লোকজন ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখছেন। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় সাইবার দাদা ম্যানিফেস্টো, একটা কম্পিউটার প্রিন্ট আউট এবং কোলাজ। তৈরি করেছেন ট্রয় ইনোসেন্ট এবং ডেল ন্যাসন। তার কিছুটা এইরকম-‘সবকিছু আবারো কাজে লাগান। পলিস্টিরিন, কম্পিউটার, ধাতু, প্লাস্টিক যা কিছু দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করুন, প্রযুক্তি আসক্ত হোন। প্রযুক্তি শিল্প পরুন। যে কেউ চিত্রকলা তৈরি করতে পারে বা হতে পারে। রাস্তায় প্রদর্শন করুন। নিজের শরীরে প্রদর্শন করুন... সমস্ত ডাটা ব্যবহার করবার বা পাওয়ার অধিকার... নিজের মাস্টার কম্পিউটার নিজে বানান... আমাদের পঁচা সমাজের ভিত দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে এইসব সাবভাসিভ কালচারগুলো... ওদের জলের লাইনগুলো কেটে দিন... আজকের যুব সম্প্রদায় আত্মসন্তুষ্ট, উদাসীন, তাদের সহজেই বিজ্ঞাপন, মিডিয়া, বিবেক বর্জিত শাসকবর্গ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই হায়ারারকির মাথারা জানুক যে পযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে ওরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। প্রযুক্তি বিদ্যাকে প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিয়ে আসুন, রাস্তাঘাটে নিয়ে আসুন’। 

শুভঙ্করঃ তো এভাবে আমি পাতার পর পাতা লিখে চলতে পারি পথিক ভাই। ইতিহাস অনেক লম্বা আর ঘটনায় ভারা যে। 
কামরুল হুদা পথিকঃ ধন্যবাদ শুভংকর দা। এখন বাকি রইলো ১৩, ১৪, ১৫। তারপর আর ৫ টা প্রশ্ন করেই শেষ করে দিবো। তবে অবশ্যই আপনাকে পুরোটা কম্পাইল করে পাঠাবো। আশা করি ২০ তারিখের মধ্যে শেষ করা যাবে। মনে করছি দ্রষ্টব্যে এ আলাপ চারিতা ভূমিকা রাখবে প্রতিষ্ঠানববিরোধী সাহিত্য আন্দোলনের পরবর্তিদের। শুভ কামনা রইলো 

কামরুল হুদা পথিকঃ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলনের দোলা লাগে বা বীজ অংকুরিত হয় মূলত ৮০ এর দশকে। আমরা কিছুদিন আগেই নিজের একটা দেশ পেলাম। অবেক জীবনের, সম্ভ্রমের আর কষ্টের বিনময়ে সদ্য স্বাধীন দেশ। আনাদের সামনেত ঠিকানা, কি হবে দেশেত পরবর্তি নীতিমালা? নতুন সরকার রাষ্ট্র এসব ভাবতে ভাবতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা, দেশোদ্রোহীদের বেরিয়ে আসা, দুর্ভিক্ষ সব মিলিয়ে তরুনদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা আর উন্মাদনা সবই কাজ করছিলো। শিল্প সাহিত্যের মধ্যে তার ছায়াপাত পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। আমাদের এখানকার লিটলম্যাগাজিন মুভমেন্ট নিয়ে আপনার কতোটুকু জানাশোনা? আমাদের নিয়ে আপনার ভাবনাটাই বা কতোদূর? 

শুভঙ্কর দাশঃ যে দেশের ভাষা বাংলা তার ভবিষ্যৎ তো উজ্জ্বল হবেই। আমাদের মতো একটা রাষ্ট্রীয় হিন্দি ভাষাকে আপনাদের ঘাড়ে করে বইতে হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েরা জানে বাংলার থেকে হিন্দি শেখাটা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী। তাই আজ এখানে বাংলা ভাষাটাই অবহেলিত এবং সেটা খুব সুচতুর ভাবেই করা হচ্ছে যাতে বাংলা ভাষাটা এখানে মরে যায়। অতএব আমরা যারা বাংলায় লিখি আমরাও তাকিয়ে থাকি আপনাদের দিকে। তাই সেলিম মোরশেদের কাটা সাপের মু-ু আমরা রিপ্রিন্ট করে বসি তাকে না জেনেই। ভাগ্যিস কোলকাতাটা এখনও আছে যার টানে ওপারের লেখকরা এখনও আসেন এপারে। তখন জানতে পারি আপনারা কী ভাবছেন। ওখান থেকে লেখার আমন্ত্রণ পাই কিন্তু এখন লেখা পাঠাতে ভয় করে। কে যে জামাত, কে যে বাজারী তা এখান থেকে তো বোঝা সম্ভব নয়। আগে পাঠিয়ে বিস্তর গাল খেয়েছি বন্ধুদের। অথচ ভাবুন প্লেনে চড়লে সিটে বসতে বসতেই চলে আসে বাংলাদেশ অথচ এখনও ওপার থেকে বই আসে না ঠিক ভাবে। আমরাও পাঠাতে পারি না আমদের কাজ। কিছু মিডল ম্যান আছে যারা বই নিয়ে যায় কিন্তু তাদের থেকে টাকা পেতে একটা জীবনও কেটে যেতে পারে। আজ নেট হয়েছে, এখন জানা যাচ্ছে অনেক সহজে কি কাজ করছেন আপনারা। কিন্তু বই পড়তে পারছিনা। যা চাই কিনতে পারছি না। মনে আছে ২০১০-এ বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় বই কিনে নিয়ে আসছিলাম। এয়ারপোর্টে ধরল। অনেক সাধ্য সাধনার পর সে বই নিয়ে কোলকাতা ফিরে আসতে পেরেছিলাম। এটা দুঃখের। এখানের কাস্টমসও নিশ্চয়ই একই কাজ করে। আমাদের বই চালাচালির একটা পন্থা ভাবতে হবে না হলে ইচ্ছে থাকলেও অজানা থেকে অনেক লেখাপত্র। 

কামরুল হুদা পথিকঃ আপনার আর শর্মীর যুগল প্রয়াস এক অনন্য উদাহরণ। আপনাদের দু’জনের লেখা আর কাজ নিয়ে বলেন। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতেই বা কি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন?

শুভঙ্কর দাশঃ শর্মীর সাথে একসাথে কাজ করতে পারাটা আনন্দের, নিজেকে ভাগ্যবান বলতেই হবে। শর্মীর ভেতর কোনোদিনই মেয়েলী ন্যাকাপনা ছিল না। একবার মনে আছে কলজস্ট্রিট প্রেস থেকে পার্ক স্ট্রিটের কোলকাতা বইমেলাতে একটা দশ ফর্মার কাগজ একশ কপি সে বয়ে নিয়ে এসেছিল একা একা। সেদিনই আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। প্যাশন শব্দটা শর্মীর থেকে ভাল কেউ জানে না। এত তরুণ তরুণী তো এলো আমার কাছে কিন্তু ওর মতো কেউ না। একটা ছোটো ঘটনা বলি। একবার সারারাত জেগে শর্মী পোস্টার লিখে এনেছিল আমাদের জন্য। যা একবার দেখে আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। তারপর বহু বছর পর শর্মী আমাকে ডাকল স্টলের বাইরে। বললো-দেখো তো বইগুলো সব-হ্যাঁ দেখছি তো। -কী হয়েছে? আমি উত্তর দিলাম। -প্রচ্ছদগুলো দেখছ? -হ্যাঁ দেখছি। -এর নব্বই ভাগ আমার করা। -তুমি বলেছিলে আমি ব্রাশ ধরতে পারি না। আমি লজ্জা পাইনি। বলেছিলাম-ভাগ্যিস বলেছিলাম সত্যি কথাটা। কাজের ভেতর কোনোরকম কম্প্রোমাইস আমার না পছন্দ। আমদের না পছন্দ। ওর বহুমুখী প্রতিভা আমাকে ঋদ্ধ করেছে। পয়সার তুমুল অভাবেও বই ছাপতে ওই এগিয়ে দিয়েছে সোনার বালা, চুুড়ি। আমরা অম্লানবদনে সেগুলো বিক্রি করে বই করেছি। ভবিষ্যতেও আরও কাজ করব। যদিও এখন আমি আর শর্মী আলাদা থাকি তবু পৃথিবীতে চোখ বুজে এখনও যাকে বিশ্বাস করি, তার নাম শর্মী। জীবন আসলে অদ্ভুত এক ছিনাল মাগি কখন যে কোনদিকে যাবে তা জানে না কেউ। আমিও জানি না। জ্যোতিষী বিদ্যাটা এ জীবনে শেখা হলো না আমার। 

কামরুল হুদা পথিকঃ ধরুন, আজ থেকে ৫০ বছর পর তখনকার কোনো সাহিত্যকর্মী প্রতিষ্ঠানববিরোধী শিল্প সাহিত্যের আন্দোলনের কাজ খুঁজছে। আপনার মতে বাংলা ভাষার প্রণিধানযোগ্য কার কার লেখা তার জন্য উদাহরণ বা দরকারী হবে বলে আপনি মনে করেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ ৫০ বছর পর আমরা কেউ বেঁচে থাকব না। মারা তো সবাই যাবে তবু এই আঁচড়াআঁচড়ি কামড়াকামড়ির সার্কাস পেরিয়ে আমরা ইতিহাসে ঢুকে পড়ব আপনি আমি সবাই। আর ছেলেটি বা মেয়েটি যদি সিরিয়াস হয় তাকে পড়ে দেখতেই হবে আমাদের কাজগুলো, শব্দের প্যাশনগুলো ঠিকই ধাক্কা মারবে তার বুকে। যে কাজ কোন একজনের নয় আমাদের সম্মিলিত লড়াইয়ের ইতিহাস, স্যাক্রিফাইসগুলো থেকে যাবে। যাবেই।

কাহুপঃ শুভ সকাল দাদা। আপনি অনেক সময় দিচ্ছেন। তবে আমি মনে করছি ভালো একটি কাজ হচ্ছে। আর কয়েকটা প্রশ্ন বাকি আছে। এগুলো পেয়ে যাবো শীঘ্রই আশা করি। 
শুভঙ্করঃ পেয়ে তো যেতেই হবে ভাই। ওই যে লিখলাম এটা আমাদের যৌথ লড়াই। 
কাহুপঃ আমি কিছু ব্যাক্তিগত তথ্য জানতে চেয়েছি। এগুলো পাঠিয়ে দিন। আমি আজ কম্পাইল করবো। আর আপনার তথ্য সম্পর্কিত কোনো লেখা থাকলে দিন। আমি শুরু করে সাজিয়ে ফেলি। যা আপনাকে পাঠানো হবে। 
শুভঙ্করঃ আমাকে আর পাঠাতে হবে না। আপনিই করে ফেলুন। 
কাহুপঃ আরেকটি কথা। আমরা আলাপ করেছি। আপিনার সাম্প্রতিক অনুবাদ বইটার কোনো অংশ অনুবাদ চ্যাপ্টারে ছাপতে চাই। আপনি সফট কপি পাঠিয়ে দিন প্লীজ। আমাদের আরেকটি গল্প অনুবাদ আছে। একসাথে আপনারটা যাবে 
শুভঙ্করঃ ডুবলে একসাথে ডুববো, ভাসলে একসাথে ভাসবো। হা হা হা । বেশ। গোগলে আপনাকে কি লিখে পাওয়া যায়? আমি পাচ্ছি না কেনো?  যঃঃঢ়ং://বহ.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম/রিশর/ঝঁনযধহশধৎথউধংঝঁনযধহশধৎউধং-ডরশরঢ়বফরধউধং যধং ৎিরঃঃবহ ধ ঃড়ঃধষ ড়ভ ঃবিহঃুভড়ঁৎ পড়ষষবপঃরড়হং ড়ভ ঢ়ড়বঃৎু রহ ইধহমষধ.[৩] ঐরং সড়ংঃ ৎবপবহঃ পড়ষষবপঃরড়হ, 'ঞযরবাবং ড়ভ ঃযব ডরহফ' (রিঃয ঈধঃভরংয গপউধৎরং ধঢ়ঢ়বধৎং রহ ঊহমষরংয.[৪] ওহ ধফফরঃরড়হ, যরং ড়িৎশ যধং ধঢ়ঢ়বধৎবফ রহ ংঁপয ঢ়ঁনষরপধঃরড়হং ধং ইষরহশ-ওহশ[৫][৬]বহ.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম 

কাহুপঃ ভাসা আর ডুবা কোনোটাতেই আগ্রহ নাই। যা করছি তা জেনে শুনেই করছি। পাওয়ার আকাঙক্ষা না থাকলে ডুবে যাবার কনো ভয় থাকে না। যঃঃঢ়://ফুবযধৎফরহঃবৎারবংি.নষড়মংঢ়ড়ঃ.রহ/২০১১/০১/ঢ়ধঃয-ড়ভ-রহফবঢ়বহফবহপব-ংঁনযধহশধৎ-ফধং.যঃসষ ফাইন এবার পেয়ে যাবো। ভালো থাকবেন। অনুবাদটা সফট কপি পাঠিয়ে দিন প্লীজ। আমি কলেজে। এখন কথা বলতে পারছি না। পরে কথা হবে। 

কাহুপঃ ংযাঁড় ড়ঢ়ড়ৎধহহড় 
শুভঙ্করঃ আপনার ১৫ নং প্রশ্ন আর উত্তর ফেসবুকে দিয়েছিলাম। প্রচুর বাওয়াল চলছে এখন তাই নিয়ে। ঘা মারা গেছে বুঝতে পারছি। 
কাহুপঃ কোথায়? পেস্ট করে দিবেন?
শুভঙ্কর : চৎধহধন ক ঈযধশৎধনড়ৎঃু: সাহিত্যে সম্মিলীত কাজ ! এটাও কি গণেশ পুজোর ক্যাটাগরিতে ঢুকে পড়ল! প্রতিষ্ঠান বিরোধীর স্পাইনটা একমাত্র নিজেরই ব্যবহারের উপযোগী, সম্মিলীত লড়াইয়ের সুযোগ সেখানে নেই এবং নেই বলেই দু-একটি ফুল্কি মাঝে মধ্যেই কেমন এলোমেলো করে দেয় সম্মিলীত পছন্দ ও রুচি...... তেমনই তো জানতাম! তুমি একটু কম জানো। জানা প্র্যাক্টিস করো, মুর্খত্ব মহান গুণ। জ্ঞানীদের প্রবল কষ্ট। তথাস্তু! এ নিয়ে কি আপনার প্রোফাইলে কিছু আছে? ঝঁনযধহশধৎ উধং চৎধহধন 
ক ঈযধশৎধনড়ৎঃু: আন্দোলনটা একা একা হয় না। ভালো করে প্রশ্নটা পড়ো আগে।
চৎধহধন ক ঈযধশৎধনড়ৎঃু: আন্দোলন কি করে একা একা হবে!... সবাই কি আর মুজফফর আহমেদ ! 
উবনৎঁঢ় ঝধৎশধৎ: যে কোনো সম্মিলিত কাজের ইমপ্যাক্টটাই থেকে যায়। যেমন গণেশ পুজোর ইম্প্যাক্টটাও ঢুকে পড়েছে আপনার শরীরে মজ্জায়। এ সময় বড় ব্যক্তিকেন্দ্রিক, বড়োই আত্মচরিতার্থের দায় নিয়ে ঘুরে চলেছে কবিতা কফিনের শূন্য সিমেট্রিগুলোতে। আমাদের উচিত আমার সময়, আমার কাজ, আমার লেখার বাইরে বেড়িয়ে মহাজাগতিক হয়ে ওঠা। আন্দোলন হওয়ার থাকলে একাও হয়। যেমন জীবনানন্দ নিজেই একটা আন্দোলন। কিন্তু তিনি কি একা? সময়ে হাজার হাজার লেখকের হয়ে লিখেছেন একা। তার ভেতরই গোটা ইউনিভার্স। আন্দোলন একটা স্রোত। যেটা গোটা জাতিটার মেরুদ-ে খাঁজ আনে, কাতর আরাম ছোঁড়ে সময়ের কোলে। হাংরি, বিট, নতুন কবিতা, গ্রাফিত্তি এরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মতো নিজেদের সময়ে কাজ করেছে, করে চলেছে। গনফট্ সমালোচনা ছেড়ে আসুন আমরা নিজেদের কাজটুকু করি। এটাই প্রয়োজন। সেটা আন্দোলন না সুনামি, সেটা দু’দিন থাকবে না দু’হাজার বছর সেতো সময়ের বিবেচ্য, আগামী প্রজন্মের ব্যাপার স্যাপার। 
উরঢ়ধহশধৎ ইধৎধঃ: সাহিত্য একক কৃতি কিন্তু সমাজে সাহিত্যিক প্রভাবের জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করতে হয়। সাহিত্যের একত্রিত প্রভাবকে সমাজের কাছে তুলে ধরতে প্রশাসন সাহিত্যিকদের নানা ভাবে সাহায্য করে। কিন্তু যখন প্রশাসন ই নিজেকে বৃহৎ ভেবে সবাইকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তখন সাহিত্যের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। কাউকে না কাউকে তখন এগিয়ে এসে সাহিত্যিক আন্দোলনের ধ্বজা তুলে ধরতে হয়। আর একটু প্রতিস্পর্ধা না হলে তো জীবনটাও একঘেয়ে হয়ে যায়। হোক না তাঁরা ওপারে আর কেউ এপারে।আমাদের উদ্দেশ্য একটাই-সাহিত্যের অগ্রগতি। কেউ তোষামোদি পছন্দ করে তো কেউ নিজে ব্যতিক্রমী হয়ে নিজের পথ চলাতেই আনন্দ পায়। পাঠক আর নবীন প্রজন্ম নিজেই ঠিক করে নিক না তারা কোন পথ ধরবে। নদীকেও বাঁধ দিয়ে একদিক ধরে রাখা যায় কিন্তু সময়কালে নদী আরো রাস্তা বানিয়েই নেয়। 
ঝঁনযধহশধৎ উধং চৎধহধন ক ঈযধশৎধনড়ৎঃু: চোখ বন্ধ রাখলে কি আর প্রলয় বন্ধ থাকে প্রণব চক্কোত্তি। লেনিনও একটা নাম বা চে গে ভারা। কিন্তু ওই একটা লোকের পেছনে অনেকে থাকে। না হলে কিছুই হয় না। মুজফফর আহমেদ-এরও হতো না। তুমি সবই জানো কিন্তু বোকা সেজে থাকতে চাও। কেন? 
কাহুপঃ হা হা বেশ চলছে কিন্তু। আমি আপনার প্রোফাইলে গিয়ে পড়ে এলাম। বেশ ভালোই লাগলো। বলতে থাকেন..., আমি রাতে বসবো কমপাইল করতে 
শুভঙ্করঃ বেশ। 
কাহুপঃ আর অনুবাদ কাজের কথা বলেছিলাম। 
শুভঙ্করঃ হ্যাঁ ওটাও পাঠাচ্ছি... 

কামরুল হুদা পথিকঃ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানববিরোধী শিল্প সাহিত্য আন্দোলন ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে আপনি কতোটুকু অবহিত? একই সময়েই এ আন্দোলনের বিকাশ ও বিস্তার, অর্থাত চর্চা শুরু। অবচেতনভাবেই আসলে এর একটা চর্চা চলছিলো বলে আমি মনে করি যদিও তাদের মধ্যে ঐ যে বললেন মূল বিষয়টা ছিলো নিজেদের লেখক হওয়া। কিন্তু মূলত স্বাধীনতা পরবর্তি নতুন শিল্প আর সাহিত্যের এই মুভমেন্ট শুরু হয়। আপনার কাছ থেকেই শুনি। 

শুভঙ্কর দাশঃ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার লড়াইয়ে আমার পুরোনো বন্ধুদের ভেতর সেলিম মোরশেদ, মারুফুল আলমের কথা মনে পড়ছে। আরো অনেকেই তো ছিলেন। মনে পড়ছে না নাম সব। আমারই অক্ষমতা। আপনি সুবিমলদাকে নিয়ে কাজ করেছিলেন। তারপর ফের সব চুপচাপ। আসলে এখানে তো সব খবর আসে না। আরশাফ সিদ্দিকি এখন কী করছে? ছেলেটার পড়াশোনাটা ছিল। তারপর আপনি আবারো করাতকল আর তরুণদের সাথে এলেন। বেশ লাগছে আমার। চারু পিন্টু আঁকছেও খুব ভালো। আমি তো শাফি সমুদ্র আর চারুকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। কে শাফি আর কে চারু একবার পরিচয়ে আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। ঋষি এস্তাবানের গদ্যের প্রশংসা করছে লোকজন এখানে। লোকের কাছে যতটা পারছি পত্রিকা পৌঁছনোর চেষ্টা করি। অবশ্য আমার কাছে আপনার পত্রিকা এসেছিল ৩ কপি সব এখন ঘুরছে হাতে হাতে। আমি বিশ্বাস করি কাজ হলে মানুষ ঠিকই জানবে তার কথা। দেরি হতে পারে যেহেতু আমাদের প্রচার যন্ত্র নেই কিন্তু তা হারিয়ে যাবে না। 

কামরুল হুদা পথিকঃ আপনার কাছে কি মনে হয় এই যে পুঁজিবাদী আগ্রাসনে সবকিছু গোগ্রাসে গিলে ফেলার যে আধিপত্যবাদ কিংবা সবকিছুকে বাজারী করে ফেলে কারবারি হয়ে ওঠা, তার বিরুদ্ধে দু’দেশের মুভমেন্টের মধ্যে আপনি কি কোনো পার্থক্য খুঁজে পান? না একইরূপ মনে করেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ দু’দেশের মুভমেন্টের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য তো থাকবেই। দু’দেশের অবস্থানগত, সমাজ এবং রাজনৈতিক বৈপরিত্যের জন্য, তবু আমাদের লড়াই যে ভাষা নিয়ে তা বাংলা। তাই মিলও অনেকটাই আছে এবং আমরা যে আধিপত্যবাদের স্বীকার সেই ক্যাপিটালিস্ট বাজার আমাদের গিলে খাচ্ছে একই ভাবে। 

কামরুল হুদা পথিকঃ লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন আসলে নিজেকে বিপন্ন করে করেই অগ্রসরমান থাকে। যেহেতু আপনি বা আমরা নিজেরাই নিজেদের বদলে ফেলতে চাই, লেখার চরিত্রের, চেহারাকে প্রেজেনটেবল করার সকল সুযোগকে বাতিল করে চলি সে ক্ষেত্রে আপনি সুবিমল মিশ্র পরবর্তি কিংবা আমাদের পরের প্রজন্মদের কাছ থেকে কি কিছু আশা করেন? না কি আশা করাটাকেও বাতিলের পর্যায়েই রাখেন? 

শুভঙ্কর দাশঃ আমার মনে হয় আশা না করাই ভালো। বিরোধিতাটা ভেতর থেকে আসা দরকার। বাইরে থেকে সেটা চাপানো যায় না। আর ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাবেই তাকে আটকানো যাবে না কোনোদিন। প্রতিষ্ঠানের পুরষ্কার, টাকা, আভিজাত্যের টান এড়ানো সোজা নয় মোটেই। মাথার ভিতর বিপ্লবটা না ঘটে গেলে কিছুই হওয়ার নয়। আমি তরুণদের লিডার হতে চাইনি কখনো। বন্ধু হতে চেয়েছি। ভালোবাসা ভাগ করে নিতে চেয়েছি। সঠিক মানুষ হতে বলেছি। ব্যাপারটা ক্লিশে শোনালেও এটা ঘটনা যে, যে ধান্দাবাজ হবে সে লেখালিখিতে এসেছে ধান্দাবাজী করতেই। বিখ্যাত লেখক হয়ে বৌ ঝি টানাটানি করতে। সম্মান দিতে শিখতে হয়। ভালবাসতে শিখতে হয়। কথা দিলে সেটা রাখতে শিখতে হয়। না হলে কিছুই শুরু হতে পারে না। কিছু কিছু তরুণ সেটা বোঝে। কিছু কিছু তরুণ আমাকে ছেড়ে গিয়ে ফিরে এসেছে আবার। তাই তরুণদের কাছে টেনে নিতে হবে। কারণ তারা ছাড়া আমরা এগোতেও পারব না যে। তবু আজ যদি আমার সব থেকে কাছের তরুণটি আমায় ছেড়ে যায় আমি কাজ বন্ধ করে শোক করব না। ভাবব এটা আমারই ব্যর্থতা যে আমি তাকে স্বাধীনতার পথ চেনাতে পারিনি। বোঝাতে পারিনি এ পথে অর্থ না থাকলেও অন্য আরাম আছে। সেই আমাদের গ্রাফিত্তির এক সাথে থাকার দিনগুলোতে একটা ডিম ভাগ করে খাওয়ার মতো। হয়ত বোঝাতে পারিনি সে পথ বন্ধুর হলেও সেই পথ ছাড়া আমাদের গতি নেই কোনো।

কামরুল হুদা পথিকঃ ধরুন, বিভিন্ন সময়ে শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন আন্দোলের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য কল্লোল কিংবা হ্যাংরি আন্দোলনের যে গতিহীন হয়ে যাওয়া কিংবা প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া সেভাবেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনও কি কোথাও গিয়ে থেমে যাবে? কিংবা তার চেয়েও কোনো নতুন মাত্রার আন্দোলন সময়ের দাবীতে উচ্চারিত হবে? বিষয়টা কেমন হতে পারে বা না হলেই বা কেনো? যদিও আমি দেখেছি প্রতিষ্ঠানববিরোধী সাহিত্যের এই মুভমেন্ট তার পূর্ববর্তি আন্দোলনসমূহ থেকে পুঁঁজিববাদী ব্যাবস্থার ধান্দাবাজী কিংবা তার সবকিছুকে পণ্য বানিয়ে বাজারে তুলে এনে দামের সাথে গুরুত্বকে মিলিয়ে ফেলার একটা অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধচারণের দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শিল্প সাহিত্য যে পণ্য নয় তার জন্যই এখানে নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় বা দাঁড়াই বারবার। এ বিষয়ে আপনার অভিমত বা বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাচ্ছি। 

শুভঙ্কর দাশঃ বিরোধিতার আন্দোলন থাকবেই। তা যে নামেই থাক না কেন। যতদিন শোষণ থাকবে, যতদিন অসাম্য থাকবে। যতদিন মানুষকে মানুষ ছোট করবে ততদিন এর বিরুদ্ধে কথা বলবে মানুষ। মানুষ চায় চিন্তার স্বাধীনতা, ভাবনার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, সৃষ্টি করার স্বাধীনতা, কাজ করার স্বাধীনতা এবং কোনো শাসকই তাকে তা করতে দেবে না। রাশাতেও স্টালিন দেননি সেই স্বাধীনতা। জেলে ভরে রেখেছিলেন ডানিল খারমস-এর মতো আরো অনেক লেখককে। তাই বামপন্থাই যে একমাত্র পথ এ কথা ঠিক নাও হতে পারে। আমিও জানিনা সঠিক পথ কী। ঋত্তিকের মতো বলতে ইচ্ছে করছে-‘আমি কনফিউসড। আমি একবার লিখেছিলাম আমাদের জন্য কোনো বাতিঘর নেই যার আলোয় এগোবো আমরা। আমাদের আলো আমাদেরই জ্বেলে নিতে হবে। লড়াই করতে করতে এগোতে হবে। ভুল হবে। কিন্তু তা মেনে আবার নিজেকে শুধরোতেও হবে।’ 

কামরুল হুদা পথিকঃ বর্তমান বিশ্ব চরমভাবেই অস্থির। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বৈশ্বিক পরিবর্তন, নদী ও জলের দুর্যোগ, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, উন্নয়ন বলতে অসম প্রতিযোগিতা আর মানুষকে পযুক্তির যন্ত্রে পরিণত করা, বিশ্বে জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দেয়া, আই এস থেকে শুরু করে ধর্মান্ধতায় ডুবিয়ে রাখা, অসম শিক্ষায় মানুষের সাথে মানুষের দূরত্বকে বাড়িয়ে রাখা, রাষ্ট, রাজন্য, সার্ক, ওআইসি, আইসিসি, ফিফা, জাতিসংঘ, বর্ণবাদ, যুদ্ধবাজ, দখলদার, মাসেলম্যান, আমেরিকা, বিশ্বনেতা, আধুনিক বেলেল্লাপনাসহ যা যা আরো বলা যায় সবকিছুই সৃষ্টির হাতিয়ার হচ্ছে পুঁঁজি ও পুঁঁজির ত্রাতা। পরাশক্তির সৌর্যবীর্যে যে নীতির জন্ম সেখানে মানুষই মানুষ থাকে না তো শিল্প সাহিত্য তো আলু পটল মুড়ি মুড়কি ব্রা পেন্টির সাথেই বিকোবে। এসবের প্রেক্ষিত থেকেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী শিল্প সাহিত্য আন্দোলনের সৃষ্টি ও বিস্তার। ক্রোধ কিংবা দ্রোহো থেকে যে মুভমেন্টের সূচনা বা নির্ভরতা তার পর আর কি হোতে পারে বলে আপনার ধারণা? যদি থাকে নতুন কোনো ধারণা তাকেও স্বাগতম। কারণ আমরা চেয়ে থাকি, অপেক্ষায় থাকি তারপর কেউ আসুক, যারা শিল্প সাহিত্যের বাজারী মুনাফাসেবী, পণ্যের হাতকড়া থেকে মুক্তির জন্য নয়া কোনো তত্ত্ব নিয়ে আমাদের বাতিল দিক। তারপরও স্বস্তি এই ভেবে পাবো শিল্প সাহিত্য আর মানুষকে কোনো শপিং মলের বাহারী ডলের গায়ে পড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে কেউ না কেউ থাকলো, নমস্য হে আগামির স্বাপ্নিকরা, তোমাদের অপেক্ষায় আমি আমরা তাকিয়ে আছি। আপনার কাছে শুনতে চাচ্ছি আগামিদিনের গল্প। বলেন, শুভংকর দা, বলেন... 

শুভঙ্কর দাশঃ যদি পাখির চোখ দিয়ে দেখি, দেখব সেই লম্বা লম্বা চাষের জমি, লম্বা লম্বা ঘাসের মাঠ আর নেই। মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে শপিং মল, বড় বড় অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট, নানান মাপের উঁচু নিচু সেইসব বাড়ির উঁচু নিচু গ্রাফের মতোই আমাদের জীবনের গ্রাফ উঠছে নামছে অস্থির ভাবে। এই অস্থিরতা মানুষই সৃষ্টি করেছে আর ভুগছে এখন। তাই আমাদের লেখাও এত অস্থির। এখন আর আরণ্যক লেখা সম্ভব নয়। লিখতে গেলে সেটা হবে বানানো এক বোধ। এই অস্থির সুয় তা রিপ্রেজেন্ট করবে না। আমরা যেভাবে বেঁচে আছি লেখা তো সেভাবেই এগোবে, তাই আমি বিশ্বাস করি। আমি যেভাবে বেঁচে থাকি রোজ তাই আমি লিখে যেতে পারি। সেটা কবিতা হচ্ছে না জার্নাল তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আর আজকের দুনিয়ায় সারা পৃথিবী জুড়েই কবিতা অন্তত চলে গেছে সেখানে। আমি যেহেতু কবিতা লিখি তাই সারা পৃথিবীর কবিতার দিকে নজর আমার। এই তো জ্যাক মিশেলিন কে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে টের পাচ্ছিলাম বহুদূর আমেরিকায় বসে লোকটা এক কথাই ভাবছে। টাকা আমাদের নেশা। টাকা ছাড়া কিছুই ঘটে না এখানে। তা সে ডলার বিল নিয়ে একটা কবিতা লিখেছে যা এরকম... ডলারের নোট ওরা তোমার হৃদয়ে আঘাত দেবে আর তোমার আত্মাকে আঘাত দেবে আর বলবে এটা ভালোবাসা এই ডলারের নোট ওই ডলারের নোট মেরে ফেলেছে ডানে মোরার ছেলেদের রকল্যান্ডে গার্ডেন স্টেটে মেরে ফেলেছে হাজার হাজার ছেলেপুলে সময়ের সমস্ত যুদ্ধে ওই ডলার বিলটা কখনোই বাফেলো বিল নয় নয় লিংকন ম্যাডিসন জেফারসন জর্জ জেনারেল ওয়াশিংটনের মুখ ওই ডলারের নোট ভালোবাসা নয় কখনোই ভালোবাসা নয় মশয় ওই ডলারের নোট কেনে চেরি পিঠে ঊরু আর ভ্যাসলিন কিনতে পারে তোমার স্বপ্নের লালসা আর ফুচু সালসা কিনে দেয় লোকজনকে আর তোমার মনের উপর বয়ে যাওয়া সমস্ত হাওয়াদের ওই দু’মুখো নোটটা শক্তিশালি আর ইতর তোমার কাছে যদি ওই ডলারের নোট না থাকে তাহলে ভুলে যাও সোনা ভুলে যাও বিল তুমি দুর্দশায় আর কপর্দকশূন্য সমস্ত বেড়ালগুলো চেল্লাচ্ছে আকাশে তোমার কাছে যদি ডলারের নোট না থাকে ওই এক টুকরো ছাপা কাগজ তাহলে তুমি একটা কুকুর আর রাজা আর এক অমূল্য বিস্ময় তুমি একটা চোর কসাই মদের বারে পরিবেসক মুচি বাসন ধোয়ার লোক ওয়েটার বেশ্যার দালাল হা-হা-হা-হা তোমার কাছে যদি ডলারের নোট না থাকে ওরা তোমার হৃদয় ভেঙে দুমড়ে দেবে আর ভেঙে দেবে তোমার ইচ্ছাশক্তি তোমার কাছে যদি ডলারের নোট না থাকে ভুলে যাও সোনা ভুলে যাও বিল তোমার কাছে যদি ডলারের নোট না থাকে তোমার কাছে নেই ব্যাস এটুকুই শুধু কবিতাটা এই জন্য দিলাম যাতে একটা ধরনাই দেওয়া যায়। ওনার কবিতার বই কেউ করেনি। সারা জীবন লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনগুলোয়, বেঁচেছেন দারিদ্রসীমা বরাবর। রাস্তা ঘাটে কবিতা পড়েছেন। কিন্তু লড়াই থামান নি। সমাজ কে চিরে চিরে দেখিয়েছেন তার বাস্তব রূপ। তাই তো আমরা করতে পারি। দেখ কীভাবে বেঁচে আছ তোমরা। মুখের সামনে আয়না মেলে ধরতে পারি। 

কামরুল হুদা পথিকঃ বাংলা ভাষার এলাকাগুলোতে যারা আমরা মূল ধারার লিটল ম্যাগাজিন করে যাচ্ছি বা আমাদের বইগুলো গাটের পয়সায় করছি তাদের প্রকাশনাগুলোর উপস্থাপনের বা প্রাপ্তির বা বিনিময়ের কোনো সেতু বা ব্যাবস্থা থাকার কোনো পথ বা প্রয়োজন আছে কি না? যেমন বাংলাদেশ, কোলকাতা , আগরতলা, ত্রিপুরা বা অন্য এলাকার সাথে কিংবা অন্যান্য দেশের ইংরেজি কাগজের যোগসূত্র স্থাপনের একটা পথের কথা বলছিলাম। আপনার অভিমত বা চিন্তার কথা জানতে চাচ্ছি। 

শুভঙ্কর দাশঃ এটা খুব প্রয়োজন। দেশ দুটোর আইন পেরিয়ে কী করা যায় আমাদের ভাবা উচিৎ। অন্তত এখনি যেটা করা যায় সেটা প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া। নেটে কাগজ করা। লেখালিখি পোস্ট করা। ব্লগ তৈরি করা, ওয়েবসাইটের সাহায্য নেওয়া। বিদেশী সমস্ত লেখকদের সাথে সেভাবেই যোগাযোগ আছে আমার। প্রিন্টেড বই বা ম্যাগাজিন পাঠাতে এখন অনেক খরচ। অনেক সময়ই তা বইয়ের দামের থেকেও অনেক বেশি। বইমেলাগুলোতে চলে আসার চেষ্টা করা এপার থেকে ওপারে, ওপার থেকে এপারে। সেটাও পয়সার সমস্যায় অনেক সময় সম্ভব নয় হয়তো। কিন্তু সেতুটা তৈরি করা দরকার একান্তই। চেষ্টা করা সেসব প্রকাশক খুঁজে পাওয়ার যারা ছোটো প্রকাশক, অন্যরকম বই করতে আগ্রহী। আমি পেয়েছি কয়েকজনকে তাই একথা বললাম। যাদের ধান্দাবাজী এখনও কলুষিত করতে পারেনি। তবে তা খড়ের গাদায় সুঁঁচ খোঁজার মতো কঠিন।

কামরুল হুদা পথিকঃ আর কোনো পথ কি নেই। যেমন আমাদের কেউ না কেউ আসা যাওয়া করলে আমাদের কাগজ আনা নেওয়া করতে পারবে। আর আমাদের বই যৌথ বা আলাদা করেই দুই জায়গা থেকেই কি বের হতে পারে না? 
শুভঙ্করঃ ভাবা যেতে পারে, একটা পথ তো বের হতেই পারে। 
কাহুপঃ সমবেত আর্তনাদ ও উত্তর পর্ব কি গ্রাফিত্তির ঠিক আগেই 
শুভঙ্করঃ হ্যাঁ, আপনি যখন কোলকাতায় আসেন তখন মনে হয় সমবেত আর্তনাদ করতাম। 
কাহুপঃ মনে হয় গ্রাফিত্তিও করতেন। কারণ সময়টা ছিলো ১৯৯৫/৯৬ এর দিকে 
শুভঙ্করঃ এই মুহূর্তে আর মাথায় কিছু আসছে না। 
কাহুপঃ ১৬ নাম্বারের প্রশ্নটা বাদ রয়ে গেলো দাদা 
শুভঙ্করঃ দেখছি। 
কাহুপঃ দরকার নেই। এই মাত্র আমি সেলিম মোরশেদ ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম ফোনে। উনার অমায়িক খচ্চর ও একটা গল্প যাচ্ছে দ্রষ্টব্য সূচিতে। বলছিলাম শুভঙ্কর দাকে ১ মাসের মতো খুব জালাচ্ছি। উনার সাথে প্রায়ই বসা হয় আমাদের। আর বুকাওস্কির ভূমিকাটা পেলে আপনার সাথে অন্যসব কথা হবে 
শুভঙ্করঃ বেশ বেশ, আজ বিকেলার মধ্যে দেখছি। এখন রান্না করতে হবে যে। 
কাহুপঃ আপনার জন্মস্থান কোথায় বলা যাবে? 
শুভঙ্করঃ কোলকাতা 
কাহুপঃ ধন্যবাদ। রাতের আগে আর কিছু বলছি না।
 শুভঙ্করঃ ভালো থাকবেন। হাহ হা হা হা ...

গ্রাফিত্তির সম্পাদক ও প্রকাশক বন্ধু প্রতিম প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম শুভঙ্কর দাশের হাসির মধ্য দিয়েই দীর্ঘ প্রায় মাস একের এর আলাপ পর্ব শেষ হয়। সুবিমল মিশ্র-র পর কোলকাতার এই অন্য একজন, যার সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধী সাহিত্য আন্দোলন ও লিটল ম্যাগাজিনের বহুমাত্রিক দিক নিয়ে এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হোলো (তা আবার প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাবস্থাপনায়) যা দ্রষ্টব্য সূচিকে ঋদ্ধ করেছে বলে আমি মনে করছি এবং পরবর্তি প্রজন্মকে এ আন্দোলনের বিষয় আসয় নিয়ে বুঝতে সহযোগিতা করবে বলেও আমি মনে করি।



Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages