মাতাল শহরের গল্প - কামরুল হুদা পথিক

কামরুল হুদা পথিক

সম্পাদক: দ্রষ্টব্য ও করাতকল

সর্বশেষ

Home Top Ad

আপনি জীবদ্দশায় অপ্রাতিষ্ঠানিক থাকতে পারেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান নামের বুনোশুয়োর আপনাকে থাকতে দেবেনা কারণ, তাদের ‘ঘি’ বলেন আর ‘গু’ বলেন কোন কিছুতে ‘না’ নেই

বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯

মাতাল শহরের গল্প

১.
আমাদের চারপাশে বয়েছিলো যে সকল নদী
তা এখন কোনো এক দূরতম শহরের কথা
যেনো রূপকথা হয়ে গেছে, প্রাচীন সভ্যতা যদি
বলি-ভুল হবে না। যেমন পু-্রনগরের কথা

করতোয়া নদীর জলের কিনারে ভিড়িত চাঁদ
আধডুবা তোমার দূ'পায়ে আলতো জলজ চুমু
এ কিসের মোহোনীয়া স্পর্শ, যেনো নেই কোনো খাঁদ
জলসাঘরে বাহারী পায়ে নুপুরের রুমুঝুমু।

পু-্ররে আকাশ আজ ছেয়ে আছে ছাই রঙ্গা মেঘে
মেঘের নিনাদে প্রকম্পিত এই শহরের রাত
শুকনো নদীর উপর খসখসে তারারা জেগে
আছে, মাতাল শহরে ওঠে ঝড়- চাঁদের প্রপাত।

নদীরা বনের পাশে শীর্ণকায় বেদনার ছবি
সাপের খোলোস ছেড়ে পালিয়েছে দুপুরের রবি।

২.
পাখিদের চিৎকারে মাঝরাতে ভেঙ্গে গেছে ঘুম
শহরে ছড়িয়ে গেছে তাহাদের মৃত্যু সংবাদ
পাহাড়ের গা ঘেঁষে রয়েছে যত শস্যের আবাদ
ডানা বেয়ে স্বেত রক্ত ধারা, কেটেছে চাষীর জুম।

মাতাল দৈত্য এসেছে শহরে নিয়ে বৈরী বাতাস
মাটি চাপা দেয় পাখিদের কফিন-ভারী নীরবতা
উত্থিত পাখির কংকালে জ্বলে আগুনের বার্তা
শহর কাঁপিয়া ওঠে কু-শাসনে, ছিঁড়ে অন্তর্বাস।

শহরে সবুজ নেই-নেই কোনো সে কালের ছবি
ছবিতে ফাঙ্গাস পড়ে ঝুলে আছে ঘুণপোকা সব
ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে সাপিনীর ফোঁঁস ফোঁস রব
পাখিরা উড়িয়া গেছে যাহারা বাঁচিয়া ছিলো সবি।

পাখিদের আত্মাহুতি নিয়ে তর্জমা করেন কবি
কবি দেখে নিমগাছে ঝুলে আছে কবিদের ছবি।

৩.
রাত্তির থেমে রয়, কুয়াশার মায়াবি তেরপাল
জুড়ে থাকে অসংলগ্নকাল আর মাকড়সার
জালে আটকে রয়েছে বিচ্ছুড়িত চাঁদের অসার
আলো, রুদ্ধ জলীয় অংশে দেখি সন্ত্রস্ত শৈবাল।

একটা বানকুড়োলি হয়ে যায় ফ্রিজ-শট-ছবি
যার মধ্যমায় ভেঙ্গে তছনছ ছেলেটির ঘুড়ি
ছেলেটি অদৃশ্য, লাল-নীল বেলুনের ওড়াউড়ি
আকাশ গ্রাস করে দলবদ্ধ শকুন-মৃত রবি।

কিশানের লাঙ্গলের ফলায় আকাল-সংবাদ
কিশানির কুলায় শ্যাওলা, ফসলর আঁশ নেই
পিচ্ছিল মাটি বন্ধা জননী, জননীর ক্রোড়ে নেই
দুধভাত, চারদিকে সমারোহ দুর্ভিক্ষ আবাদ।

ঈশাণের মেঘ কেটে একদিন সু-নিপুণ হাত 
ভরে দিবে দুধভাত, কেটে যাবে আঁধারের রাত।


৪.
বাতাস কামড়ে দিয়েছে কালনাগিনীর নীল বীষ
তাই লু' হাওয়া বয়, অম্লজান স্বল্পতায় সবুজেরা
হলদে অসুখে চাতকের কাছে যাচে অহর্নিশ
বীষ হরিণী ওঝার চুম্বনে মুক্তো হোক বাতাসেরা।

ইট ভাটার ধোঁয়ায় বিষাক্ত নির্যাস কার্বনের
কুচকুচে ধূলিকণা মিশে গিয়ে কোনো ধুমকেতু
পুচ্ছের সাথে ছুটে চলা ধ্বংস যজ্ঞে মরণের
বাঁশি বাজাতে বাজাতে ভেঙ্গে দিয়েছে সবুজ সেতু।

শহরের মাতাল শরীর ভেঙ্গেছে ভোরের নীরবতা
পাখিসব করে রব রাতি পোহাইলো কে বা কাহারা
নিষিদ্ধ করে আবৃত্তি সরবে পুড়ে যাওয়া পাতা
সব এক হোতে থাকে বৃষ্টি প্রার্থনা করে তাহারা।

কাল নাগিনীর বীষ শুষে নেয় ওঝা ধন্যন্তর
সবুজ পাতারা গেয়ে ওঠে যেনো জলজ অন্তর।

৫.
সাপের লেজে পা রেখেছে কে আর অমনি ব্রহ্মা-
কাঁপিয়ে দিয়েছে কেউকাটা বিষাক্ত জিভের ফণা
ধূসর আকাশ থেকে নামে রক্ত বৃষ্টি শনিকা-
আমাদের ঘর থেকে উড়ে যাচ্ছে সুখ পাখি মনা।

যন্ত্রণায় ছাতি ফেটে কাতরায় মাতাল শহর
পিঁপড়েরা সারি সারি দলে চলে খাদ্য অভিযানে
কবর থেকে নীরবে খোয়া যায় হাড়ের বহর
অম্লজান পুড়ে পুড়ে বাতাসকে ভাঙ্গে বিভাজনে।

একদল পুরোনো মানুষ আসে কোন ভূমি থেকে
নিজেরা অচেনা তাই ভিন্ন ভিন্ন ভাষা সব চোখে
কোথায় নিমের শাখা আর রঙধনুর রঙ এঁকে
আকাশের সীমা রেখা নদীতট খুঁজে খুঁজে দেখে।

আমাদের নদীগুলো ফিরে এসো বন উপবনে
মাতাল শহর থেকে ফিরে আসি মন প্রশমনে।

৬.
মাটিকে পুড়িয়ে তুমি বানাও ইটের সারি আর
বাতাসকে আটকে রেখেছো পিঞ্জরে পাখির শব
গিরগিটি ছুটে আসে ছুটে আসে শকুনেরা সব
ইট খোলার চুঙ্গির বিষে মোর শহর অঙ্গার।

কার্বনের কুচকুচে কালো ধোঁয়ার কু-ুলি ভরা
আকাশ, সুন্দরবনে নিদ্রা হরণকারী বিদ্যুৎ
প্ল্যান্টের আলোময়তার ভীড়ে কী যে সব অদ্ভুত
খেয়ালে শহরে তাকিয়ে দেখেছি কালো বাতি জরা।

শহরের পোড়া পোড়া মানুষগুলো আজ ঝিমুচ্ছে
বনের হিংস্রতা লাফিয়ে আসছে দলেবলে কতো
ঝিমুচ্ছে শিশুদের লাল নীল বেলুন কতো শতো
আজ দল বেধে শহরের সব নদীরা ঝিমুচ্ছে।

মুচড়ে ফেলবে এসো ইট খোলার কার্বন চুঙ্গী
আমাদের শহর বাঁচুক থাক নদীপ্রাণ সঙ্গী।

৭.
আসমান থেকে রক্ত বৃষ্টিপাত হলে আমাদের
চিরচেনা শহর রক্তাক্ত হোয়ে পড়ে আর তার
মানুষগুলো রক্ত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তাহাদের
ভেতর বেড়ে ওঠে অজানা অপ্রাকৃত অনাচার।

যত্রতত্র ক্ষত বিক্ষত মানুষ। লাশঘরে ডোম,
তার চাকুর মদ্যপ নিশানায় শকুন আকাশে
ওড়েে মাতাল শহর জুড়ে বিভোর বিবশ মোম
গলে গলে পড়ে নাকমুখচোখ অচীন ফ্যাকাশে।

আমরা আকাশ ভেঙ্গে মস্তিষ্কের ব্যায়াম চর্চায়
নিরন্তর বারুদ জ্বালিয়ে রক্ত বৃষ্টির মহড়া
করেছি আর শাদানীল ভেঙ্গেছি বীষের বর্ষায়
আমাদের শহরে আসেনা আর রাতের পরীরা।

আগুন রকেট বানিয়ে ঝলসে দিয়েছো আকাশ
আকুতি না শুনে তুই পুড়িয়ে দিয়েছিস বাতাস।

৮.
চাপাতির কোপে জখম আমার প্রাণের শহর
কিছু কঁচি হাতের টুকরো আর কিছু চোখ মুখ
পুকুরের তল থেকে বস্তা বন্দী বিচ্ছিন্ন শামুক
লাশ ঘরে জমে ওঠে মদ্যপ ডোমদের বহর।

ভোরের সূর্য ওঠে না ভয়ে এ ত্রাসের জনপদে
নিমের ঔষধি ছায়া গুঁড়িয়ে ফেলেছে কাঁটাবন
কার্তুজের বজ্র চিৎকারে পোড়া লতা-গুল্ম বন
চিল আর শকুনের ভিড়ে নেই বক-সারি নদে।

শহরের ঘুমগুলো ডোমের চাকুতে কাটা জিভ
লটকে রয়েছে উঠোনের আড়াআড়ি টানা তারে
তারা কি সীমার বংশের কেউ নীলনদ পাড়ে
তলোয়ার খাপে নিয়ে এলো ওরা রক্ত লেখা নিভ।

হে আকাশ হে বাতাস তোমরা কি রয়েছো তন্দ্রায়
প্রাণের শহর চায় যে আশ্রয় রুখে ওঠো হে ঝঞ্চায়।

৯.
পুঁজির হাঙর দিনে দিনে খেয়ে ফেলে আমাদের
সোনালি আঁশ ধানের বীজতলা ঝাউবন থেকে
পাখিদের বাসা গুইসাপ ডোবা নালা একে একে
দানবের চিমনির ধোঁয়ারা শাসায় তাহাদের।

শিল্পের শেকড় যেনো হাঙরের মুখ শুষে ফেলে
দুধের নহর, শহরের মাটি যেনো জলন্ত কড়াই
নদীগুলো গুম করে বানিয়েছো বর্জ্যের সরাই
যন্ত্রের দানব এনে তুমি দিয়েছো আগুন জ্বেলে।

পিঁপড়ে ও মানুষেরা ছুটে যায় খাদ্য অন্বেষণে
পুঁজির সন্ধানে আগুনের হল্লা করে দানবেরা
সেলাই কলে সেলাই হয় জীবনের সব কড়া
পশ্চিমের ঘরে বিকোয় রক্ত জীবনের অগ্নিরণে।

বিপ্লবের নামে এ কোন ডাইনোসার এলো ঘরে
বুর্জোয়া দানব অগ্নি উৎসবে নগ্ন নৃত্য করে।

১০.
আপেলের বুক খুঁটে দেখি বিষ ভোমরার হুল
বিষে বিষে সয়লাব শহরের ফলের দোকান
ক্ষয়ে ক্ষয়ে পরমায়ু হারাচ্ছে আগামীর সন্তান
বিষের বেলুনে জমা হচ্ছে জীবন বিনাশী শূল।

প্রেতের মোড়কে লুকিয়ে রেখেছো পুবের শহর
নরকে মড়কে ফুসফুসে আজ পোকাদের বাস
মনুষ্য প্রাণি অক্সিজেন হারিয়ে রুদ্ধ নিঃশ্বাস
রক্ত খেকো জন্তুর গর্জনে কম্পিত রূপের নহর।

সোনালি ধান ছাই করেছে কীটনাশকের দানা
কঙ্কালসার দেহের পরে কীট পতঙ্গের মেলা
প্রলয়ের শিঙা বাজায় দানব রক্ত গঙ্গা ভেলা
ফসলের মাঠে দানবের ত্রাস ক্ষুধার্ত হায়েনা।

মাটি খুঁড়ে আবিষ্কৃত হয় কোনো প্রাচীন নগরী
প্রলয় পাড়ে স্বপ্নের বীণায় জেগে থাকি প্রহরী।


১১.
কসাই খানায় রোজ জবাই করা রক্তের স্রোতে
দেখা মিলে মনুষ্য উল্লাস,অব্যাক্ত গোঙানি সুর
পাশেই উগড়ে পড়ে হারিয়ে যায় অচেনা দূর
শহর লোহার শিকে ঝুলে থাকে আগুনের মর্তে।

আগুনের উপর ঘুরতে থাকে উপাদেয় গ্রীল
বন্যতা ঊঠে আসে নেকড়ের মতো লেকের পাড়ে
হল্লা করে সভ্যতার ঘোড়া খায় সব ছিঁড়ে ছিঁড়ে 
শহর জুড়ে বন্য মানুষ খেয়ে ফেলে সব নীল।

রেস্তোরায় পোড়া মাংসে কামড়ে ধরে বন্য দাঁতে
দূর থেকে চোখে ভাসে হিংস্র হায়েনা উৎসব
মানুষ মানুষ নেই যেনো বা নেকড়ের তা-ব
শহর যেনো বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে মধ্য রাতে।

কে বাঁচাবে প্রাণের শহর কাঁদে বিপন্ন বিকাল
নদী ও সবুজে ফিরে পাক তারে শূন্য মহাকাল।


১২.
শহরে আসছে ধেয়ে ক্রমে উত্তরের ধূলিঝড়
মানুষ ছুটছে দিগ্বিদিক বাঁচার আকুতি মনে
রাষ্ট্রযন্ত্র অসার গ-ার ঘুমায় গভীর বনে
নিজগোত্রে রক্তের খেলায় মত্ত কাঁপছে শহর।

রাতের নন্দন লুটেরার ঘরে নষ্ট ভ্রূণ কাঁদে
প্রিজম ভ্যানেই ধর্ষিত হয় রাবণের তর্জনে
কড়ি কারখানার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া গর্জনে
রাষ্ট্র ঘুমায় নস্যিতেলের যন্তর মন্তর ফাঁদে।

নরপশুদের কু-উল্লাসে বেহুশ শহর আজ
বিবস্ত্র নারীর গলিত লাশের গন্ধ আবিষ্কার
রাজসভাসদে কুকুরের লালা থাকে নির্বিকার
ভোজন প্রমাদে কাটা চামচে চাটেন মহারাজ।

উন্মাদের হাতে অরক্ষিত আমার শহর আজ
জেগে ওঠো সব ভাঙ্গো চূড়ো রাবণের রণতাজ।


১৩.
ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে শহরের রূপকথা
মানুষ আর যন্ত্রের এ যেনো সিরামিক নগর
হাঙ্গরের মুখে এগুতে থাকে মানুষের বহর
টায়ারের নিচে পিষে যায় শহরের উপকথা।

ড্রেনের ভেতর পড়ে থাকে গলিত স্খলিত লাশ
ডেটলের গন্ধে যোনি ছিঁড়ে আনে অবাঞ্ছিত শিশু
শ্রমিকের দেহ আগুনে অঙ্গার কতো শতো বিষু
রাতের শহরে দেহ ছিঁড়ে খায় উচ্চ মার্গে বাস।

শহরের পতি এলকোহলিক অন্ধকারে ঢাকা
উলঙ্গপনার জয় জয়কার অর্থ কড়ি খেলা
শহর কাঁপায় জংলী সন্ত্রাসে রক্তাক্ত অবেলা
হিরক রাজার মু-ু মহারাজ গর্জে কিন্তু ফাঁকা।

জনতার ঘামে সদা জেগে থাক তূর্য স্বপ্ন বাণে
মাতাল শহর আবিষ্কৃত হোক হিরক সন্ধানে।


১৪.
মতিঝিল থেকে কবে কখন হারিয়ে গেছে ঝিল
বকগুলো পথহারা আকাশে খুঁজে বেড়ায় পথ
টাকশালে মুদ্রানীতি মানে না শাপলার শপথ
বাইনোকুলার খুঁজে বেড়ায় হারানো সেই বিল।

বাইরে ভেতরে তালা যন্তর মন্তরে সব চলে
বাঈজির নেশা চোখে ডুবে থাকে অন্ধের শহর
বার থেকে বের হয়ে খুঁজে ফিরে তাড়ির বহর
দেহ নিয়ে দর কষে মুদ্রা খেলা চলে দলে দলে।

মতিঝিল মতিহারা চাপা থাকে শোকের মাতম
সিরামিক রাক্ষসী গিলে খায় রক্ত অ-মানবিক
বিকৃত বাণিজ্যে এনিম্যাল সেক্সে মুনাফা অধিক
বিল নেই জল নেই আছে শুধু মতির রমণ।

কোনোদিন মতিঝিল মহাকালে ঝিল হয়ে যাক
শাপলা শালুক আর মতিদের বক ফিরে পাক।


১৫.
উপচে পড়া জলস্রোতে ভেসে শহর কুপোকাত
নগরের পিতা বেঘোর ঘুমান সিনানের জলে
গুলিস্থানে ছড়িয়ে পড়েছে পচামড়া জলে স্থলে
ড্রেন ছেড়ে নাড়িভূড়ি উঠে করেছে তেলেসমাত।

তিলোত্তমা কাব্যকলা নিয়ে করা হয় বেশুমার
এ শহর যেনো শুক্লাদশী চাঁদ প্রেমের দরিয়া
যেনো বস্ত্র খসে পড়া তন্বী নারী অপরূপ ঐশ্বরিয়া
শীতাতপে শুয়ে স্বপনে দেখে বিলাসে মহিমার।

নগর ভবনে বাজেট সভায় পিতা মহাশয়
পকেটের ধন সহজে নামাতে ওঝার তলব
লকারের ধন হরিলুট হবে ছিলো মতলব
শহরের আলো অন্ধকারে থাকুক দুঃসময়।

নগরের পিতা পৈতা রাখুন দেখুন গুলিস্থান
গুলবাগিচার সেরাব ছেড়ে নিতে হবে প্রস্থান।


১৬.
শহরের মোড়ে সন্ধ্যা রাতে বসেছে কড়ির খেলা
খেলা ডুবে যায় অন্ধ গলিতে বেচা বিক্রির পালা
কড়ির বদলে দেহ নিয়ে খেলে নষ্ট ভ্রষ্ট কালা
তিলোত্তমা মাতাল শহরে চলেছে সাপের খেলা।

সাপের লেজে পা দিয়ে তুমি কিনেছো মরণ বিষ
ওঝাহীন এই কড়ির শহরে সাপিনিরা খেলে
সিঙ্গা ফুঁকে বেদেনীর নায়ে নিশিরাতে তুমি গেলে
নিল বিষে নীল শহর মাতাল করিছে কুর্নিশ।

শহরের প্রাণ কারা কেড়ে নেয় নির্মম নির্দয়
প্রাণ-সুখ ভরা ঘরগুলো আজ বিপণী বাজার
দর্শক নেই গোলাপী ট্রেনে নেই রমা মনিহার
কড়ি নিয়ে গিয়ে কড়িহীন তুমি পেলে পরাজয়।

রমনার আকাশে ওড়াও এখন পাখিদের ডানা
কড়িবিষে আর নীল করোনা সবুজ সামিয়ানা।

১৭.
নদীর সাথেই বেড়ে উঠেছিলো শহরের প্রাণ
বুড়িগঙ্গার পাড় ছিলো দুষ্টুমির গড়ের মাঠ
শীতলক্ষার স্নেহে ছিলো সাঁতারের উদাসী পাঠ
তুরাগের তীরে ছিলো সমবেত প্রার্থনার গান।

পাঁজরের ধন পর করে নেয় বর্গী বুঝি ওরা
জলস্নানে ধোঁয়া শহরে বইছে বিষাক্ত হাওয়া
জলের ভেতর তারা করে বর্জ্য বিষের ধাওয়া
পিপাসার জলে পোকাদের বাস মৃত্যুর মহড়া।

যে নদীর ঔরসে শৌর্যবীর্যে শহর মহিয়ান
বেড়েছে সেখানে দানবের ত্রাস হলুদ সন্ত্রাস
জননীর বুকে চাবুক চালিয়ে ভেঙ্গেছো বিশ্বাস
বেদখল আজ নদী মাতৃকা রক্ত পুঁজের স্নান।

বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষা আর তুরাগের অভিশাপ
অগ্নিঝড়ে অগ্নুৎপাতে হবে শহরের নিপাত।

১৮.
অজস্র বিশ্রী শব্দের ত্রাস চর দখলের মতো
গ্রাস করে ফেলে রমনার সবুজ নীলিমা আর
ভোরের সমীর পাখিদের সমবেত প্রার্থনার
পবিত্র মন্দির, মুয়াজ্জিনের মায়ার সুর যতো।

ডক-ইয়ার্ডিয়ের লোহা কাটার যন্ত্রের আওয়াজ
থেকে ইটভাঙ্গা কল আর বেডফোর্ড জংধরা
ইঞ্জিনের উৎকট চিৎকার মবিলের পোড়া
বিষে কাঁদে শহরের প্রাণ-চলে নষ্ট রেওয়াজ।

এ শহরে শিশুরা বধির প্রায় দৃষ্টি প্রতিবন্দী
হিংস্র শব্দের অনাচারে নিদ্রাহীন চিৎকার
জঠরের ভ্রূণে আগুনের তাপ যে বহ্নি চিতার
হারানো শহর পুড়ে ছারখার মাকাল কাসুন্দি।

খুঁজে ফিরি আমি সফেদ শহর মায়াবী রৌদ্দুরে
পাখি ও শিশুরা অমৃত চরণ গায় মধু সুরে।


১৯.
বন বেড়ালেরা বন্য কথা ছড়িয়ে দেয় শহরে
ওরাই রাজা ওরাই ওঝা ওরাই যে জমিদার
শিক্ষা থামাও বানাও বোমা কুৎসিত চিৎকার
কড়ি চাই কোষাগারে লেখাপড়া যাক ভাগাড়ে।

হীরক রাজার বুনো ষাঁড় ছাড়িয়াছে হুংকার
শিক্ষা প্রজাদের অমানুষ করে পাঠাও লকারে
অন্ধকারে ভুূতটুত তাড়াতে ডেকে আনো ওঝারে
ধন্নন্তরী মহাজ্ঞানীজন মন্ত্রী থাকুক আমার।

শহরের খাঁদে বস্তিবাসী এক ঘরে পরিজন
কলের শ্রমিক চ-াল ও ডোম থাকে চিতপাতে
উড়াল সড়কে শহরের পতি দেখে নিশিরাতে
তিলোত্তমা নগরে এ যেনো আবর্জনা হরিজন।

হরিজন কহে হীরক রাজার মন্ত্রী সভাসদে
হামাক ছাড়'দে, ভ- ষ- ভরা তুর মসনদে।



২০.
মানুষ সাপ্নিক, তন্দ্রায় অ-তন্দ্রায় মানুষ ঠক
নিজেকে ঠকায়, ভেঙ্গে চূরমার কাচের দেয়াল
আহত গোলাপ, গোলাপেরা নির্বাক বেখেয়াল
মানুষ সাপ্নিক, রক্ত জলে অপেক্ষা প্রত্যাশি বক।

জল জল নেই, জলে হিমোগ্লোবিন, খয়েরী লাল
মাছেরা ছুটে পালায় উল্লম্ব আর সমান্তরাল
হাত শান চাকু, চাকুতে জবজব রক্তাক্ত কাল
কাল পোড় খাওয়া-পড়ে থাকা আমার কংকাল।

ধ্যানমগ্ন বকের দু'পা ডুবে থাকে রক্ত মেশা জলে
অপেক্ষায় প্রার্থনা, প্রত্যাশায় স্বচ্ছ স্ফটিক সুর
মার্বেল গড়ায়-লাগামহীন তার ধ্বণি সুরাসুর
একদা বক পাখা নাড়বে সুবর্ণ কালের তলে।

মানুষ স্বাপ্নিক-বক উড়ে যেতে চায় বহুদূর
রামধনু মুছে যায় বক ধ্যানী স্থির অন্তপুর।


২১.
একটা স্বপ্ন দেখছি, স্বপ্নটা সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম
দৃঢ় প্রত্যয়ে আত্মবিশ্বাসের সিঁড়ি বেয়ে উঠছে
ক্রমশঃ জমিনের উদোম পিঠে হাঁটছে ফিরছে
চৈত্রের খড়ায় সৃষ্টি বিপর্যয় করে অতিক্রম।

আমার এ স্বপ্নটা শেকড় ছড়াবেই চারদিক
উদ্যম তার প্রবল, প্রসারিত শাখা প্রশাখারা
করবে আগাছার বৃদ্ধি কর্তন-যূথবদ্ধ যারা
তবুও তাদের বিকৃতি ফিরে পাবে পথ সঠিক।

স্বপ্নটা বেরিয়ে আসছে ক্রমশঃ তেজী অশ্ব মত
কাঁপিয়ে সড়ক, ভেঙ্গে চূড়ে যতো মেকী আস্ফালন
উত্তুঙ্গ তেজস্বী সমুদ্রের পিঠে সত্যের খঞ্জন
হাতে এগুচ্ছে নির্ভীক, নষ্টরা ভ-রা কম্পরত।

শহরে দুষিত বাতাস ছাওয়া গারো অন্ধকার
বিপন্ন বিষণ্ণ চৌকাটে স্বপ্নটা কাক্সিক্ষত সবার।



২২.
শহরের ভেতরই আমাদের বিশাল খোয়াড়
চতুর বানর সব জানে সার্কাসের কসরত
শূন্যে ডিগবাজি দিতে চালান কঠিন মহরত
বানরের সভাসদে দেখা মেলে কর্মের কামার।

কলা গাছে কলা কই শহরের অধিরাজ বলে
কলা ছোলা খেতে খেতে মাথা নারে হয় হয় হয়
শহরের উড়াল সড়ক কই? বলে মহাশয়
চান্দে সওয়ার সবে খানাপিনা সঙ্গে যাতে চলে।

মেঘরাজ্যে শুয়ে বসে দিবেন কূটনৈতিক চাল
সীমানা কি দরকার? বিশ্ব দেখে বানরের খেলা
পাগলা ঘোড়ার পিঠে অধিরাজ নিদ্রাসুখ মেলা
গাধারা গাধাই থাক সঙ দেখে থাক বেসামাল।

শহরে বানর বাড়ে সার্কাসে বানর বে-সুমার
অধিরাজ অক্কা গেলে চামড়া ছিলে বিজ্ঞ চামার।



২৩.
মিথ্যে গল্পের শহর বানায়াছে মহাজ্ঞানী জন
ভজনে মগ্ন থাকে মানুষ আর প্রাণি বৃক্ষ সবে
গুল্ম লতা পোকা মাকড় পরাশ্রয়ী সবাই ভবে
মূর্খ সৃষ্টিকুল মিলে খাদ্যশস্য করে অন্নেষণ।

চারদিকে বন্দনার গানে মুগ্ধ শহরের লোক
মিথ্যে ভেল্কির কবজে জ্ঞানহারা সব প্রাণিকুল
পিঁপড়ের সারি পিষে তুলে ফেলে শেকড়ের মূল
ভজন ভোজন শোনে মহাজ্ঞানী ভনে মায়ালোক।

পাপের শহরে নেই খাদ্যবস্ত্র নেই বাসস্থান
বৃষ্টিহীন মাটি ফেটে মাঠের ফসল পুড়ে ছাই
সবুজের ছায়া পুড়ে আগুনের পোড়া গন্ধ পাই
প্রাণহীন প্রাণিকুল ভাগাড়ে ভাগারে বহমান।

এ কোন পাপের ফসল এ কোন অয়দিপাউস
মহাজ্ঞানী মহাজনে গিলে খায় মাঠের আউস।


২৪.
মৃত মাছেদের শাদা চোখে শহর ঘুমিয়ে থাকে
ইদানিং, নেতিয়ে পড়েছে ব্যাস্ত নীলাঞ্জনাদের
বাজু বন্ধনের ঝলমল করা বাতিবাহারী বেদের
বিছা আর কুচকুচে বেড়ালেরা ঢুকে যায় ফাঁকে।

বেড়ালের কটা চোখে ঝলমলে জ্বলে আলোগান
রাতের শহরে নেমে আসে বিশ্রী অশুভ মেকাপ
স্ট্রিট লাইটের আলোর নিচেই খুলে ফেলে ঝাঁপ
সাপের খোলোস নিশিঘরে দেখে পাপের বাগান।

শহর গন্ধম খেয়ে ছিটকে পড়েছে, ঝাড়বাতি
তার ভেঙ্গে চুরমার কাচকাটা বিক্ষত এ দেহ
নিয়ে মাতাল সন্দেশ, ডুবে যায় ভিন্ন কোনো গ্রহ
খুঁজে পায় মাছেদের মৃত চোখে জ্বলে সন্ধ্যা বাতি।

হে শহর জেগে উঠো, কোনো এক বৃন্দাবন শাখে
জেগে উঠো প্রাণরসে, প্রেমারসে প্রশান্তির সুখে।


২৫.
বুঝি ভূমিকম্পে দুলে দুলে উঠে শহরের রাত
রোষে উঠে জলঘুম, কুকুরের কান্না ভেজা রব
এভিন্যুর আলোগুলো থর থর ভেঙ্গে পড়ে সব
শিশুদের চোখগুলো তুলে নেয় হায়েনার হাত।

বুঝি আসমান থেকে রক্ত বৃষ্টি ঝড়ে ক্ষণে ক্ষণে
শহর নিষ্প্রাণ, ক্ষয়ে ক্ষয়ে ভেঙ্গে পড়ে নগরের
সুগন্ধি কপাট। ধ্বংস যজ্ঞের কালো গহ্বরের
কূপে স্তূপীকৃত প্রাণের গোঙানি ভাসে সমিরণে।

বুঝি সুইসাইড শহর, দলে দলে ভীড় করে
সব পাখি গান। প্রাণের স্পন্দন জমা রেখে রেখে
বিলীন সভ্যতা মৃত, কফিনের নীল গন্ধ মেখে
নিষ্প্রাণ স্তব্ধতা নামে প্রহেলী সুরের লাশঘরে।

বুঝি মহেঞ্জোদারো কিংবা পূন্ড্রনগরের বেশে
হারানো প্রাণের নিষ্প্রাণ শহর ফিরিবে এ দেশে।

-কামরুল হুদা পথিক


Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages