বিষ পিঁপড়ার গান - কামরুল হুদা পথিক

কামরুল হুদা পথিক

সম্পাদক: দ্রষ্টব্য ও করাতকল

সর্বশেষ

Home Top Ad

আপনি জীবদ্দশায় অপ্রাতিষ্ঠানিক থাকতে পারেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান নামের বুনোশুয়োর আপনাকে থাকতে দেবেনা কারণ, তাদের ‘ঘি’ বলেন আর ‘গু’ বলেন কোন কিছুতে ‘না’ নেই

বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯

বিষ পিঁপড়ার গান



০১
বিষ পিঁপড়ার গান 

শহরের দিকে দলবেঁধে উঠে আসছে সমর
সজ্জিত বিষ পিপড়ারা যেনো অভিজ্ঞ সামরিক
কোনো প্লাটুনের সারি-কার্তুজ বহনকারী মনুষ্য
সৈনিকের নিশানা ভেঙ্গে দিয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ।

তোমাদের খামারে বেনিয়া কারবারি ঢুকে পড়ে
ঢোলবাদ্দির মহড়া থেকে আকাশ মাটি ও জলের
ভেতর কত স্বপ্নের পাখিরা ভাগাড়ে লিপিবদ্ধ
জেনারেলের পুস্তিকা দেখে ক্ষিপ্ত পিঁপড়ার দল।

বিষ পিঁপড়ারা দলছাড়া হয় না কখনো জানি
বয়সী গাছের খোড়লে লুকিয়ে রাখে রণপণ
রোডম্যাপ ধরে চলমান বিষ পিঁপড়ার গান
তাদের দখলে চলে আসে অচল রাজার শান।

বিষ পিঁপড়ারা আসছে- গাইছে বিপ্লবের গান
জেগে উঠো বন্ধু সবে তুমি যে দ্রোহের তিরন্দাজ।

০২
পেরেক

কতোটা পেরেক ছিলো যীশুর পবিত্র দেহ জুড়ে?
নিজের পায়ের পাতা পেরেকের প্রদাহ প্রহারে
রক্তাক্ত জীবন-এই আমার দেহের ঘরদোর
তুচ্ছ তাচ্ছিল্যেই থাক নীল সংগীতের মহিমায়। 

কাটা আঙ্গুলের রক্ত ভেজা মাকুহীন তাঁতিদের
উপড়ে ফেলা চোখের মণি নিয়ে নারক উল্লাস
করে নীলকর পশুরা আর সুরা সাকি শরীর
পিতলের প্লেটে গুলিয়ে ফেলে তাড়ির চক্ষুঘোর।

কতোটা পেরেক ছিলো যীশুর পবিত্র দেহ জুড়ে?
কতোটা পেরেক পেলে ঝুলিয়ে ফেলা যায় মনুষ্য
সভ্যতার বীজপত্র কিংবা শিশুদের জিভ কেটে 
তৈরি করা যায় হত্যাচিত্র নামে পেরেক মহিমা?

যুগে যুগে মানুষের দেহ বিদ্ধ করেছে পেরেক
পেরেকের গ্লানি বিদ্ধ করে নিজেরে যীশুর ক্রুশে।

০৩
আত্ম প্রতিকৃতি 

কামারের শক্ত হাতে আগুনে পোড়ানো লোহাদের
পেটাতে পেটাতে জন্মে এ আমার আত্ম প্রতিকৃতি
যেনো কোনো চাপাপরা নগরীর মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে 
আবিষ্কৃত কোনো কষ্ঠি পাথরের ভাঙ্গাচোরা মূর্তি।

মেঘেরা জলের স্নেহ হারিয়ে ফেলেছে যেনো কবে
হারিয়ে ফেলেছে জল তরঙ্গের গান, দুপুরের
খরতাপে কিশোরীর বৃষ্টি ভেজা দেহ পুড়ে গেছে
আকাশের রক্তচোখ থেকে ঝরে শীলা রক্তপাত।

এবরো থেবরো দেখি আত্ম প্রতিকৃতি এ আমার
জং ধরা বেহালার বেসুরো অশ্রাব্য কোনো গান
মাথার ভেতর থেকে স্বপ্নের পাখিরা উড়ে গেলে
ফসল পাহারা দেয় কাক তাড়ুয়ার মিথ্যে গল্প।

আমি যেনো অবিন্যাস্ত ছেঁড়া-খোড়া কোনো পাতা
ধুলোবালি মেঠো পথে মুচড়ে টুচড়ে যাচ্ছি পদতলে।

০৪
মায়াঘর 

প্রখর রোদের উপর দিয়ে উড়ে যায় আমার
সমুদ্র মৈথুন বালুকাবেলার মরিচিকা ঘুড়ি
দূর পাহাড়ের স্মৃতি ছুঁয়ে যাওয়া মেঘের মায়া
নাকফুল খুঁজে ফেরা বালিকার বয়ঃসন্ধিকাল।

মায়ামোহে মায়ালোকে মায়াভ্রমে পাখিমনে বাস
আমার সকল শ্লোক রোদের উপর নেচে নেচে
খেলে আর শ্লোকের পেছনে বাজে পাতাদের বাঁশি
রঘুনাথ শেঠ তুমি বানাও সুরের নিদ্রাঘর।

মহাকালের ঘোর লাগা আমাদের গ্রহে অমানিশা
আসে গাঢ় অন্ধকার আর প্যাঁচাদের রাত জাগা
অপলক চোখে খেলে যায় স্বপ্ন ফসলের ঘ্রাণ
ভোরের চুলোয় চিতোই পিঠার ফুলে ওঠে যৌবন।

মায়াঘরে বন্ধ চোখে উড়ে আসে প্রজাপতি রঙ
ইন্দ্রজালে ভেসে থাকি ভেসে থাকে আগরের ঘ্রাণ।

০৫
শৈল্য চিকিৎসক

এক অপরাহ্ন নির্বিকার পড়ে থাকে এ জ্যৈষ্ঠের
উত্তপ্ত পথের পরে শুয়ে থাকা কুকুরের লম্বা
জিভের মতোন ঝুলে পড়া লালা থেকে অবিরাম
ঝড়তে থাকে দুঃসময়ের কালচিটে দাবদাহ

দোভাষী বাতাস যেনো তর্জমা করে বিলাতে থাকে
নীল ফোরাতের পুঁথি হায় হোসেন হায় হোসেন
মর্সিয়া ফুঁসিয়ে উঠে আর জলের সন্ধানে যাত্রী
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে চলে তৃষিত শিশুরা

রৌদ্রতাপে পুড়ে যায় সবুজ পাতার সংসার 
বিবর্ণ বিকেল জুড়ে রূগ্নতার ক্ষয়ে পড়া প্রভা
ক্ষত বিক্ষত আমার মেয়ের ও মায়ের শরীর
মনুষ্য হীনতা, প্রভাতের কোমল শরীর নীল

বুনো শুয়োরের ত্রাসে ঘর্মাক্ত শৈল্য চিকিৎসক
নির্বিকার কাটেন ছিঁড়েন ভুলে নিজের এপ্রোন।


০৬
দেশলাইয়ের বাক্স

দেশলাইয়ের বাক্স জুড়ে আগুনের শীতনিদ্রা
তাইতো মাথার পাশেই নিশ্চিন্তে রেখে দেই তারে
বিশ্বস্ত বেড়াল যেভাবে পাশেই ঘুর ঘুর করে
চোখের মণিতে সুপ্ত রাখে জমাট আলোর বল

বারুদের ব্যাবহার ঘুম পাড়িয়ে রাখে নির্বিঘœ
পাশাপাশি বারুদের সহোদরা নির্বীর্য স্বভাব
কখনোই ফেটে পড়ে না অগ্নি লাভার বিস্ফোরণ
যতোক্ষণ না তার ব্যাবহার মানুষ শিখে ফেলে।

বত্রিশ কাঠিতে লুকিয়ে থাকে এক বন পুড়িয়ে
ফেলার ক্ষমতা, মাথার পাশেই শুয়ে বসে থেকে
নিরাপদ রাখে তোমার সকল মিথ্যে মানবিক
ধবল বলাকা ভোর পাতা বাহারের রঙছবি

পাশবিক আস্ফালন দেখে দেশলাই রোষে উঠে
ফেটে পড়ার ভয়েই বারুদেরা থাকে মিথ্যে ঘুমে।

০৭
চোখের মমি

চোখের প্রতিই ছিলো পক্ষপাত তাইতো তোমার
চোখকে চেয়েছি মমি বানিয়ে রেখে দেই কোথাও
অজানা মন্দিরে, দিতে আসা পাড়াগাঁর কিশোরীর
চপলতা কিংবা বধুরা বুনো ফুলে ফলে শুরু

অতি প্রাকৃত চোখের পূজো মন্দিরের আলোঘরে
বুঝি সে চোখের বিচ্ছুরিত আলোরশ্মি পূজারীর 
কাছে, যেনো কোনো মায়াঘর অতিন্দ্রীয় নীলাচল
হয়তো প্রেমের অর্ঘ ছিলো কোনো প্রেয়সীর হাতে

উপড়ে ফেলা প্রেমিকের প্রিয় চোখের নীল মণি,
আত্মহননের আগেই রেখে গিয়েছিলো প্রামাণ্য
সূচক তার নীল খামে, প্রতিদানে শিল্পীর মমি
আত্মাহুতি দিয়েছিলো কোনোকালে এই মন্দিরে
চোখের প্রতিই ছিলো পক্ষপাত কবির তাইতো
নিজের চোখের মমি নিয়েই কবির ফেরীযাত্রা

০৮
মৃত্যু উপত্যকা

উড়াল সড়কের নিচেই দেখি রক্তাক্ত শহর
মৃত্যু উপত্যকা স্মৃতি বিস্মৃতির বিমূর্ত ম্যুরাল
নিভৃতে সাপের কান্না গড়িয়ে পড়া অনাথ বিষ
কতোটুকু উড়াল দিবে তুমি সভ্যতা চূর্ণ করে

মৃত্তিকা মুচড়ে ফেলে ভূ-কম্পন সকল সুস্থির
জলের অস্থির কণা, মাছেদের আর্তনাদে ফেটে
যায় প্রাণের কণিকা মৃত্যু মুখোমুখি পাখিদের
সমবেত প্রার্থনা জুড়েই অন্ধ কূপের গহীন

মগডালে থাকে শকুনের অপেক্ষার ক্ষুধাঘর
বেড়ে উঠে রক্তনেশা, পাজরের হাড় খুলে ছিঁড়ে
ফেরে খাবলে মৃত্যুর উপত্যকা জুড়ে চলে রাশ
উৎসব, তোমার শিল্পের বেসাতি, নীল সংগীত

মৃত্যুর মহিমা বুঝি গেয়েছিলো ভায়োলিন দল
জলের গভীরে আবিষ্কৃত হবে প্রাচীন ফসিল।

০৯
শিলাবৃষ্টি

বৃষ্টির বন্দনা করি আমি কৃষকের সোনা ধান
নবান্নের উৎসবে ফোটে খই ফোটে ভ্যাট ফুল
তামাটে দুপুর খড়া চাতকের তৃষিত বন্দনা
কিশোরী পাখির ডানা নেচে উঠে জলের শরীর।

আমের মঞ্জুরী উড়ে ভরাট স্বপ্নের উৎসবে
কাঠফাটা রৌদ্রতাপে তামাটে মৃত্তিকার প্রার্থনা
ঈশানে মেঘেরা জমাট উল্লাসে নারকীয় নৃত্য
করে ভেঙ্গেচুরে দেয় বরফের সফেদ পাহাড়।

কিষাণীর স্বপ্নের কুলায় সোনালি ধানের শীষ
থেকে শিলাবৃষ্টি কেড়ে নেয় ফড়িঙের লাল ফ্রক
ভেঙ্গে যায় নৌকার গলুই, ছৈ-এর ভেতর ভাঙ্গে
নয়া বধুর যৌবন, ভাঙ্গে স্বপ্নের বাসর সজ্জা।

বৃষ্টি বন্দনায় ধ্যান করে সন্ধ্যা ভোরে পাখিকুল
দোঁয়াশ মাটির বুকে হাসে জলরঙা ঘাসফুল।

১০
কফিন টেক্সট

কফিনের ডালা খুলতেই আতরের গন্ধ মাখা
চায়ের মিহিন পাতা থেকে উঠে আসে যাত্রাপালা
কঠিন পেরেক দিয়ে গেঁথে রাখা সুগন্ধি সুবাস
ছড়ানো মাছির শব যাত্রা জুড়ে কীর্তনের সুর।

সময়ের বরফঘুম কোমল হীমে নির্বিকার
শুয়ে থাকা কর্পুরের কী যাদুর পুরনো শহর 
নিঃশ্বাসেরা কফিন ঘেঁষে ভীড় করে নীলরঙা
চাদরের নীচে, বুঝি ডাকে কোনো দূর অন্ধকার।

সোহাগের চাবি আঁচলের নিধি বন্ধন আলগা
হয়ে গলে যেতে থাকে তাই নিঃশব্দে ঐশী সুর 
বাতাসের অদৃশ্য ঢেউয়ে ভেসে ভেসে বিউগল
শোনাতে থাকে তাহার মন্ত্রের মুগ্ধতার জপ।

বরফ ঘরে অপেক্ষা প্রিয়জন ভাঙ্গা ভাঙ্গা মুখ
বুঝি কোনো আবিষ্কৃত তাম্রলিপি কফিন টেক্সট।


Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages